ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অবসরে গেছেন? সন্তানকে জীবিত অবস্থায় সম্পদ দেওয়ার আগে এই ৩টি বিষয় ভেবে দেখুন

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৪, ৩০ মে ২০২৫

অবসরে গেছেন? সন্তানকে জীবিত অবস্থায় সম্পদ দেওয়ার আগে এই ৩টি বিষয় ভেবে দেখুন

ছবি:সংগৃহীত

আপনি হয়তো সারাজীবন পরিশ্রম করে অনেক কিছু অর্জন করেছেন—বাড়ি, জমি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ। এখন বয়স হয়েছে, হয়তো অবসরে গিয়েছেন। একটু প্রশান্তির সময়। ঠিক এই সময়েই একটা ভাবনা মাথায় আসে—এই সম্পদগুলো আমি কাকে দিয়ে যাবো? সন্তানকে? এখনি কিছু দিয়ে দিলে কেমন হয়? 

এই ভাবনাটা খুব স্বাভাবিক। সন্তানের মুখে হাসি দেখলে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে আর কিছু মেলে না। কিন্তু একটুখানি ধৈর্য ধরে যদি ভাবেন, তাহলে বুঝবেন—এতে লাভ যেমন আছে, তেমনি কিছু বিপদও আছে।

চলুন দেখে নিই, কেন বুড়ো বয়সে সন্তানদের জীবিত অবস্থায় বড় অঙ্কের সম্পদ দেওয়া একটু ভেবেচিন্তে করা উচিত।

১. নিজের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা আগে
সন্তানেরা নিশ্চয়ই আপনার কাছে খুব প্রিয়। তারা যেন ভালো থাকে, সেটা আপনি সব সময় চান। কিন্তু আপনি কি নিজের ভালো থাকার কথাও ভাবছেন?

জীবন অনিশ্চিত—হঠাৎ বড়সড় চিকিৎসার দরকার হতে পারে, বাড়ির মেরামত লাগতে পারে, বা বাজারে মুদ্রাস্ফীতির কারণে খরচ বেড়ে যেতে পারে। যদি বড় অঙ্কের টাকা সন্তানকে এখন দিয়ে দেন, তাহলে পরে হয়তো আপনি নিজেই বিপদে পড়ে যেতে পারেন। তাই আগে নিজের প্রয়োজন নিশ্চিত করুন, তারপর সন্তানকে সাহায্য করার কথা ভাবুন।

২. পরিবারে মনোমালিন্য তৈরি হতে পারে
যদি আপনার একের বেশি সন্তান থাকে, তাহলে সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারটা খুব সতর্কভাবে করতে হবে। টাকা সমান করে দেওয়া যায়, কিন্তু বাড়ি, জমি বা ব্যবসা? কার দাম বেশি, কে কী পেল—এই তুলনা থেকেই পরিবারে রাগ, অভিমান, এমনকি ভাঙনও তৈরি হতে পারে।

আপনি হয়তো ভালো চেয়েই দিয়েছেন, কিন্তু ফলাফল যদি উল্টো হয়? তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সবার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা এবং ন্যায়সঙ্গত বণ্টন খুবই জরুরি।

৩. সবাই সব টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না
এ কথা আমরা সবাই জানি—হঠাৎ হাতে অনেক টাকা এলে অনেকেই সেটা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। নতুন গাড়ি, ঘুরতে যাওয়া, দামি জিনিস কেনা—এসব করার লোভে পড়ে যায়। অথচ সেই টাকা দিয়ে যদি ভবিষ্যতের জন্য কিছু গঠনমূলক কাজ করা যেত, তাহলে উপকার হতো আরও অনেক।

সন্তানদের টাকা দেওয়ার আগে ভেবে দেখুন—তারা কি সত্যিই সেই টাকা ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুত? যদি না হয়, তাহলে একটি ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে আপনি শর্ত ঠিক করে দিতে পারেন—কখন, কীভাবে সেই টাকা ব্যবহার করা যাবে।

তাহলে কি সন্তানদের কিছুই দেওয়া যাবে না?
না, তা নয়। বরং জীবিত থাকতেই সন্তানকে সহায়তা করলে আপনি নিজের চোখেই দেখতে পারবেন—তারা কীভাবে সেটা কাজে লাগাচ্ছে, কেমনভাবে তারা জীবন গড়ে তুলছে। এতে আপনারও আনন্দ হবে।

আরেকটি বড় কারণ হলো—এস্টেট ট্যাক্স। আপনি যদি মৃত্যুর পর সব দিয়ে যান, তাহলে সরকার সেই টাকার একটা অংশ কর হিসেবে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনি জীবিত থাকতেই পরিকল্পনা করে কিছু কিছু দিয়ে দিলে সন্তানরা আরও বেশি উপকৃত হতে পারে।

আর একটা দিক আছে—আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি চাপের মধ্যে আছে। চাকরির বাজার, পড়ালেখার খরচ, বাড়ির দাম—সবই আকাশছোঁয়া। আপনি যদি একটু সহায়তা করতে পারেন, তাহলে হয়তো তারা একটু স্বস্তি পাবে, বাঁচার রসদ পাবে।

শেষ কথাটা একটু মন দিয়ে শুনুন
সন্তানদের ভালোবেসে সম্পদ দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা খুবই সুন্দর। তবে সেটি যেন আপনার নিজের ক্ষতির কারণ না হয়। আগে নিজের প্রয়োজন নিশ্চিত করুন, তারপর সন্তানদের কথা ভাবুন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সন্তানদের শুধু সম্পদ না দিয়ে, আর্থিক জ্ঞান দিয়ে যান। টাকা খরচের শিক্ষা, সঞ্চয়ের গুরুত্ব, বিনিয়োগের কৌশল—এই শিক্ষা থাকলে তারা শুধু আপনার দেওয়া টাকাই নয়, নিজেদের জীবনও গড়ে তুলতে পারবে।

আপনার ভবিষ্যৎ আর পরিবার—দুটোই রক্ষা করেই উত্তরাধিকার গড়ুন। সেটাই তো আসল 'লেগেসি'!

মারিয়া

×