ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব, নাকি পরিকল্পনার ব্যর্থতা? ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউস থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:০৩, ৩১ মে ২০২৫

ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব, নাকি পরিকল্পনার ব্যর্থতা? ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউস থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী এবং টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউস থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। যদিও এটি ছিল একপ্রকার নির্ধারিতই, তবুও সময়টা এবং প্রেক্ষাপট ঘিরে জেগে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এক্স-এ দেওয়া পোস্টে মাস্ক নিজেই বলছেন, “এটা এক্সপেকটেড কিছু নয়”। তাহলে কেন হঠাৎ এই বিদায়?

ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব, নাকি পরিকল্পনার ব্যর্থতা?
মাস্ক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’, যাঁর দায়িত্ব ছিল ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (DoGE) প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়া—সরকারি ব্যয় কমানো এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই মাস্ক যুক্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের বাজেট সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে।

তবে বিদায়ের আগে মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বাজেট পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, “বিশাল করছাড় এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক বৃদ্ধির প্রস্তাব ফেডারেল ঘাটতি বাড়াবে এবং DoGE-এর মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করবে।” তবুও ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক চিরে যাওয়ার ইঙ্গিত মাস্ক দেননি। তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার, ১৩০ দিনের জন্যই তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং সেই সময়সীমা পূর্ণ হওয়ায় তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন।

ডজ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
DoGE প্রকল্পটি মাস্কের হাত ধরেই শুরু হয়। প্রথমে ঘোষণা ছিল, ফেডারেল বাজেট কমানো হবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার। পরে তা কমে আসে একশ পঞ্চাশ বিলিয়নে। কর্মসূচির আওতায় প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার সরকারি কর্মী চাকরি হারান বা অবসর নিতে বাধ্য হন। ভুল ছাঁটাইয়ের অভিযোগ ওঠে, এমনকি পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং কিছু সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল হয়।

মাস্ক বিদায় নেওয়ার পর প্রকল্পটি এখন একপ্রকার দোষারোপের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে বলে তার ভাষ্য। অনেকেই বলছেন, তার অনুপস্থিতিতে প্রকল্পটির গতি হ্রাস পাবে বা ভিন্ন পথে পরিচালিত হবে।

ব্যবসায় ক্ষতি, রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত
সরকারি কাজে সময় দেওয়ায় মাস্ক তার কোম্পানি টেসলা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এর প্রভাব স্পষ্ট—২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে টেসলার বিক্রি ১৩% হ্রাস পায়, যা কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। শেয়ারমূল্য পড়ে যায় প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্য মাস্ককে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়; অ্যাক্টিভিস্টরা টেসলা বয়কটের ডাক দেন, গাড়ি ও চার্জিং স্টেশনে হামলার ঘটনাও ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এই প্রেক্ষাপটে মাস্ক জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছর আবারও পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগ দেবেন, বিশেষ করে টেসলার নেতৃত্বে। রাজনৈতিক অনুদান দেওয়ার দিক থেকেও পরিবর্তন আনছেন তিনি। ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের জন্য আগে দেওয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান এবার কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।

শেষ কথা
ইলন মাস্কের হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় শুধুই সময়সীমা শেষ হওয়ার ঘটনা নয়—এটি এক জটিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রেক্ষাপটের অংশ। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, মাস্কের অনুপস্থিতিতে DoGE প্রকল্প কী দিশা নেবে? আর মাস্ক নিজে কতটা সফল হবেন আবার তার প্রযুক্তি সাম্রাজ্যে মনোযোগ ফিরিয়ে?

সময়ই দেবে সেই উত্তর।

 

রাজু

×