
ছবি: সংগৃহীত
লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেটির। কিন্তু পরিবার যখন খরচ চালাতে হিমশিম খায়, তখন বইয়ের বদলে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় একখানা পাসপোর্ট। মা তার গহনা, বাবা হালের গরু কিংবা একটুকরো জমি বিক্রি করে প্রবাসে পাঠান সন্তানকে। ছেলেটি বিমানে ওঠে এক বুক চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে—শুরু হয় তার প্রবাস জীবন।
স্বপ্নের দেশে পা রেখে শুরু হয় কঠোর খাটুনি। পরিবারে ঋণের বোঝা, চারপাশের সামাজিক প্রত্যাশা আর কর্মক্ষেত্রে মানসিক নিপীড়ন মিলিয়ে সেই স্বপ্নটা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। নিঃসঙ্গতা, অধিকারহীনতা ও অবহেলায় এক সময় অনেকেই চরম হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
কেন এত মানুষ মারা যাচ্ছেন? বিশেষ করে এত অল্প বয়সে? এর উত্তর এখনও অনিশ্চিত।
গত ২৯ মে, বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘প্রবাসে মৃত শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।
তিনি জানান, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নারী শ্রমিকদের মধ্যে মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। নারী শ্রমিকদের ৩২ শতাংশ মৃত্যু অস্বাভাবিক। এর মধ্যে দুর্ঘটনা, খুন এবং আত্মহত্যা অন্যতম কারণ। এসব নারী শ্রমিকের অধিকাংশই কর্মজীবনের শুরুর দিকেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
২০২৪ সালে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত এসেছে ৪,৮১৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের মরদেহ। যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই সব মৃত্যুর গড় বয়স মাত্র ৩৮ বছর। আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে—২৪ শতাংশ।
ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, অনেক সময় মৃতদেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুর সনদে লেখা হয় “স্বাভাবিক মৃত্যু”। ফলে প্রকৃত কারণ আড়াল থেকে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ পরিবার মৃত্যুর সনদে লেখা কারণ বিশ্বাস করেন না।
সংলাপে বক্তারা জানান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণের সময় প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মর্যাদাহীন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয় পরিবারগুলোকে। মরদেহের কাগজপত্র নিয়েও পড়তে হয় নানা জটিলতায়।
এই বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—যে মানুষগুলো নিজেদের শ্রমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে, মৃত্যুর পরও তাদের জন্য সম্মান নিশ্চিত করা হয় না। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র ও সমাজকে এই প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে আরও আন্তরিকভাবে ভাবার।
ফরিদ