
এক সময় গ্রামীণ জনপদে সন্ধ্যা মানেই ছিল পড়ালেখার এক নিবিড় আবহ। দিনের শেষে খেলার ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে প্রতিটি ঘরে শুরু হতো পড়ার ধুম। মায়েরা ছিলেন সন্তানদের পাঠদানের সারথি, আর অভিভাবকের শাসন ছিল পড়ালেখার প্রতি শিশুর আগ্রহ ধরে রাখার উপায়। আজ সেই দৃশ্য শুধুই স্মৃতিতে সীমাবদ্ধ।
মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতো পড়তে বসার দৃশ্য এখন বিরল। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমকে দেখা যায় স্মার্টফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত, টেবিলে বইয়ের চিহ্ন নেই। তার মা টিভিতে নাটক দেখায় মগ্ন, সন্তানকে পড়তে বসানোর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
এমন দৃশ্য ছিল আরো কয়েকটি বাড়িতেও। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীম জানায়, “আসলে একটু পর পড়তে বসবো, ফোন তো সারাদিন আব্বুর কাছে ছিলো, এখন পেয়েছি।” অষ্টম শ্রেণির তিশা দাবি করে, “মোবাইলে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি, তাই ফোন হাতে নিয়েছি।” অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত ও অসহায়।
অভিভাবক রাবেয়া বেগম বলেন, “অনেক চেষ্টা করি মনোযোগী করাতে, কিন্তু ছোট বাচ্চা থাকার কারণে সময় দিতে পারি না।” আরেক অভিভাবক মুসলিম উদ্দিন বলেন, “স্যাররা মোবাইল থেকে উত্তর খুঁজে লিখতে বলে, কিন্তু ফোনে আসক্তি ভালো না।”
এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, “স্মার্টফোনের অপব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তারা। ভবিষ্যতে ভয়ানক পরিণতি হতে পারে।” চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী মুতাসিম বিল্লাহ অভিভাবকদের আরও দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সন্তানকে নিয়ে সন্ধ্যায় পড়তে বসা উচিত। তখন মোবাইল-টিভি থেকে দূরে রাখা দরকার।”
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক মাঈনউদ্দিন বলেন, “স্কুল বা কোচিং-এ যতই পড়ানো হোক, বাড়িতে না পড়লে তা কাজে আসে না। নিয়মিত ঘরে পড়লে শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো করতে পারবে।”
এক সময় সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে যে শিক্ষার মশাল প্রজ্বলিত হতো গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে, তা আজ নিভু নিভু। প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে ও অভিভাবকদের নজরদারির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্য। সচেতন মহল আশঙ্কা করছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামীণ শিক্ষার ভিত্তিই হুমকির মুখে পড়বে।
আঁখি