
ছবি: সংগৃহীত।
জমি কেনার সময় দলিলের সঠিকতা এবং বৈধতা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। নাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যা ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। সম্প্রতি একজন জমি ক্রেতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি এই সতর্কতার একটি বাস্তব উদাহরণ।
একজন ব্যক্তি রাস্তার পাশে জমি কিনলেন, যার পরিমাণ ২০ শতাংশ। জমির মূল্য ছিল প্রতি শতাংশ ৮০,০০০ টাকা। তবে দলিলে জমির চারপাশের সঠিক সীমা (চৌহদ্দি) এবং হাত নকশা (হ্যান্ড স্কেচ) সঠিকভাবে উল্লেখ ছিল না। কয়েকদিন পর তিনি যখন ব্যবসা শুরু করতে গেলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে দলিলে ভুল হয়েছে, আসলে তার জমি পিছনের ২০ শতাংশ জমির সাথে মিলেছে। এই ভুলের কারণে জমির প্রকৃত মালিক আর জমি দেওয়ার জন্য রাজি নয় এবং এখন অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন।
দলিল বাতিলের কারণ ও জমি কেনাবেচায় সতর্কতার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
১. চৌহদ্দি ও হাত নকশার স্পষ্টতা: জমির চারপাশের সঠিক বিবরণ এবং হাতে আঁকা ম্যাপ না থাকলে দলিল অসত্য হতে পারে।
২. দাগ নং ও খতিয়ান নং সঠিক থাকা: জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর সঠিক না থাকলে জমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. ২৫ বছরের ইতিহাস: দলিলের পিছনে জমির বিগত মালিকানার সঠিক ইতিহাস থাকতে হবে।
৪. সাব-রেজিস্ট্রারের সীল ও সাক্ষর: দলিলের বৈধতার জন্য রেজিস্ট্রার অফিসের সীল ও স্বাক্ষর থাকতে হবে, নাহলে দলিলের আইনি গুরুত্ব কমে যায়।
৫. দলিলের নাম্বার ও তারিখ: দলিলের নাম্বার ও তারিখ সঠিকভাবে উল্লেখ করা অপরিহার্য।
৬. দলিলের প্রকৃতি: দলিল হেবা, সাফ কাবলা বা এওয়াজ বদল ইত্যাদি প্রকৃতি সঠিকভাবে লেখা থাকা জরুরি।
৭. সাক্ষী ও শনাক্তকারীর নাম সঠিক থাকা: দলিলে সাক্ষী ও শনাক্তকারীর নাম সঠিক ভাবে থাকতে হবে।
৮. দলিল লেখকের নাম: দলিল লিখনকারী ব্যক্তির নাম স্পষ্ট থাকতে হবে।
৯. জমির প্রকৃতি: জমির প্রকৃতি (কৃষিজমি, আবাসিক, বাণিজ্যিক) সঠিক থাকা জরুরি, কারণ এর ওপর খাজনা নির্ভর করে।
১০. বর্তমান মৌজ রেট অনুযায়ী মূল্য: জমির প্রকৃত বাজার মূল্য দলিলে ঠিকমত উল্লেখ থাকতে হবে।
কেন জরুরি সতর্কতা?
বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি উন্নত নয়। অনেক সময় দলিল সংশোধনে মাসখানেক থেকে এক বছরের বেশি সময় লাগতে পারে, এবং এতে অতিরিক্ত খরচ ও সময় নষ্ট হয়। এজন্য জমি কেনার সময় একজন দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মূল উপসংহার
-
জমি কেনার পূর্বে দলিলের চৌহদ্দি ও হাত নকশা যাচাই করুন।
-
দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর সঠিক কিনা নিশ্চিত করুন।
-
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিলের সীল ও স্বাক্ষর যাচাই করুন।
-
জমির প্রকৃতি ও বর্তমান বাজার মূল্য মিলিয়ে নিন।
-
প্রয়োজনে একজন আইনজীবী বা জমি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
সতর্কতা না নিলে আপনার জমি কিনে নেয়ার স্বপ্নটা একদিন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে। তাই জমি কেনার সময় সবদিক থেকে নিশ্চিত হোন, যেন ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলা ও আর্থিক ক্ষতি না হয়।
নুসরাত