
ছবিঃ সংগৃহীত
জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি হয়তো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রেশন ও সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরসহ যাবতীয় কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন। তবুও কিছু গুরুতর ভুলের কারণে আপনার বৈধ দলিলও বাতিল হয়ে যেতে পারে! এমনকি আপনি নামজারি করে জমি দখলেও রেখে থাকলেও, ভবিষ্যতে জমির মালিকানা হারানোর ঝুঁকি থেকে আপনি নিরাপদ নন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের চারটি মারাত্মক ভুলের কারণে যেকোনো দলিল—এমনকি সাবকবলা, হেবা, হেবাবিল এওয়াজ কিংবা ওসিয়তনামা—বাতিল হয়ে যেতে পারে:
১. জমির পূর্ব বিক্রয়ের তথ্য গোপন রাখা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিক্রেতা পূর্বে পারিবারিকভাবে জমি হেবা করে দিয়েছেন, কিন্তু পরবর্তীতে তা গোপন রেখে আবার নতুন করে জমি বিক্রি করছেন। যেমন, পিতা যদি ছেলেকে হেবা করেন এবং তা রেজিস্টার করেন, পরে তিনি একই জমি অন্য কারও কাছে সাবকবলা দলিল করে বিক্রি করেন, তাহলে দ্বিতীয় দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে। কারণ, আইন অনুযায়ী (রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৯০৫), প্রাথমিকভাবে বৈধ দলিলধারীর মালিকানাই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
২. অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রয়
অনেক সময় বিক্রেতারা তাদের প্রকৃত মালিকানার চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করে দেন। এটি আইনত বৈধ নয়। যদি কেউ ৫ শতক জমির মালিক হয়ে ১০ শতক বিক্রি করেন, তবে মাত্র ৫ শতকের দলিল বৈধ থাকবে এবং বাকি ৫ শতকের মালিকানা বাতিল হয়ে যাবে। এতে পরবর্তীতে মালিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৩. দলিলে ভুল চৌহদ্দি, দাগ নম্বর ও তফসিল তথ্য
দলিল প্রস্তুতের সময় যদি জমির চৌহদ্দি, দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর ভুল থাকে, তাহলে সেই দলিল দুর্বল ও বাতিলযোগ্য বলে গণ্য হবে। জমির সঠিক অবস্থান, সীমা ও মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ সঠিকভাবে উল্লিখিত না থাকলে দলিল আইনিভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
৪. হেবা দলিলে বৈধ রক্ত সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা না মানা
অনেক সময় হেবা দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন খরচ কমাতে গিয়ে রক্ত সম্পর্কের বাইরে কাউকে হেবা করা হয়। অথচ হেবা কেবল রক্ত সম্পর্কীয় নির্দিষ্ট ১৪টি শ্রেণির মধ্যে বৈধ। এর বাইরে হেবা দলিল সম্পাদিত হলে তা বাতিল বলে বিবেচিত হবে।
করণীয়:
-
জমি ক্রয়ের আগে ভূমি অফিস ও রেকর্ড রুম থেকে তথ্য যাচাই করুন
-
রেজিস্ট্রার বা আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করুন
-
জমির মালিকানা ও ইতিহাস যাচাই না করে দলিল সম্পাদন করবেন না
-
হেবা বা সাবকবলা দলিল সঠিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সম্পন্ন করুন
দলিল তৈরি মানেই নিরাপত্তা নয়—সতর্কতা ও সঠিক যাচাই ছাড়া জমির মালিকানা চিরস্থায়ী হবে না। একটু অসতর্কতা আপনার লাখ টাকার বিনিয়োগকেই মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে।
ইমরান