
ছবিঃ সংগৃহীত
জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশের বহু নাগরিক আজ প্রবাসে অবস্থান করছেন। প্রবাসে থেকেও নিজের জন্মভূমিতে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ার স্বপ্ন অনেকেরই। ফলে জমি কেনা কিংবা পারিবারিক সম্পত্তির বিক্রয়ের প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে স্থাবর সম্পত্তি (জমি-বাড়ি) কেনাবেচার ক্ষেত্রে দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ায়, এখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় সরাসরি উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ দিতে হয়। ফলে প্রবাসীদের জন্য সরাসরি জমি ক্রয় বা বিক্রয় করা অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এই সমস্যার সহজ ও কার্যকর সমাধান হিসেবে রয়েছে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (Power of Attorney)। সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রদানের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের জমি-জমা সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারেন।
তিন ধরনের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি
১. অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি:
স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক, দলিল সম্পাদন ইত্যাদি নির্দিষ্ট কার্যক্রমের জন্য এই ধরণের পাওয়ার প্রদান করা হয় এবং নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তা বাতিল করা যায় না।
২. সাধারণ পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি:
প্রত্যাহারযোগ্য এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত কাজ ব্যতীত অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়।
৩. বিশেষ পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি:
নির্দিষ্ট একটি কাজ, যেমন – ভাড়া প্রদান, জমি রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা লিজ সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য ব্যবহারযোগ্য।
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রস্তুতের ধাপসমূহ
প্রথমে দেশের একজন আইনজীবীর সহায়তায় দলিলের খসড়া প্রস্তুত করতে হবে। এরপর পাওয়ারদাতা (যিনি ক্ষমতা দিচ্ছেন) এবং পাওয়ারগ্রহীতার (যিনি ক্ষমতা নিচ্ছেন) ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংযুক্ত করে দলিলটি প্রবাসে পাঠাতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে কাউন্সিলরের সামনে স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ দিয়ে দলিলটি বৈধ করতে হবে। পরবর্তীতে এটি দেশে পাঠিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সত্যায়ন ও রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার কি বাতিলযোগ্য?
আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বাতিল করা যায় না। এমনকি পাওয়ারদাতা বা পাওয়ারগ্রহীতার মৃত্যু হলেও, তা কার্যকর থাকে। তবে যদি প্রতারণার আশঙ্কা বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে আদালতের মাধ্যমে, বা উভয়ের সম্মতিতে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে, কিংবা রেজিস্টার্ড নোটিশের মাধ্যমে এটি বাতিল করা সম্ভব।
সচেতনতা জরুরি
আইনজীবীরা মনে করছেন, জমি সংক্রান্ত যে কোনও পাওয়ার দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে যখন তা অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়। তবে পাওয়ার গ্রহীতা সম্পত্তির মালিকানা দাবি বা নামজারি করতে পারেন না, বরং শুধুমাত্র পাওয়ার দলিলে উল্লিখিত কাজগুলোই সম্পাদন করতে পারেন।
বিশ্বস্ত এবং নিকটজন কাউকে পাওয়ার প্রদান করাই নিরাপদ, পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি পাওয়ারগ্রহীতা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা করা যেতে পারে।
প্রবাসে থাকা সত্ত্বেও, সঠিক আইনি পদক্ষেপ ও সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে দেশের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা অন্যান্য জমি সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন সম্ভব। এজন্য ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ একটি কার্যকর ও নিরাপদ মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মারিয়া