ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতার পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০১:০৭, ২ জুন ২০২৫

বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতার পদত্যাগ

ছবি: জনকন্ঠ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠকসহ তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন। 

রবিবার (১ জুন) দিবাগত রাত আটটার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ওই তিন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

পদত্যাগ করা নেতারা হলেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম তুরান, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আবিদ ও সদস্য তাহাসিন আহমেদ রাতুল।

পদত্যাগকারীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা ও মহানগরের কমিটিতে থাকা অধিকাংশ নেতা নানান অপকর্মে জড়িত হয়ে পরেছেন। ৫০ শতাংশ নেতাকর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। তারা বিভিন্ন প্রকৌশল দপ্তরে গিয়ে ঠিকাদারি কাজ পেতে তদবির, মামলা বাণিজ্য করছে। 

কমিটির নেতাদের মধ্যে মুখ্য সংগঠক হাসিবুর আলম তুরানের নাম ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে চলছেন।

হাসিবুর আলম তুরান লিখিত বক্তব্যে বলেন," জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার শক্তিতে রূপান্তর করে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশপন্থি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে এসে অনেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই প্লাটফর্মকে বিতর্কিত করেছেন।"

তিনি আরও বলেন, "সম্প্রতি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি আমার (তুরান) পরিচয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। কথিত কিছু নেতাকর্মী দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমজীবী মানুষের কাছে না গিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও আমলাদের দপ্তরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমনকি তারা দেশের মানুষকে সচেতন না করে পুরোনো রাজনৈতিক ধারায় আগ্রাসী, দখলবাজি, সাম্প্রদায়িক উসকানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্য করে চলছেন।"

তিনি আরও বলেন," রাজনৈতিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য পরিষ্কার না করে উদ্দেশ্যহীন রাজনৈতিক মব তৈরি করে রাখা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীরা ব্যাপক অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সেই নারীদের স্বাধীনতা রক্ষায় এদের কোনো ভূমিকা নেই।সাংগঠনিক, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত এবং সচেতনতা তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এরা নিজেদের মধ্যেই কোন্দল সৃষ্টি করে চলছেন।আমাদের ব্যক্তিগত মূল উদ্দেশ্য ছিল, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অন্তর্ভুক্তমূলক অংশগ্রহণ থাকবে এবং বাংলাদেশপন্থি রাজনৈতিক ধারার চর্চা হবে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ না করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যা জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এ কারণে সংগঠনটি একটি গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে। তাই জুলাই শহিদ ও আহতদের রক্তের সাথে বেঈমানি না করে পদত্যাগ করাকে যৌক্তিক মনে করেছি। "

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আবিদ ও সদস্য তাহাসিন আহমেদ রাতুল।

অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন বলেন," মুখ্য সংগঠক তুরান নয়, স্থানীয় কর্মী তুরানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আমরা কৌশল হিসেবে ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। পুলিশ কমিশনার ঘটনার তদন্ত করেছেন। তাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেন, "চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা এখন পর্যন্ত কেউ তদবির করিনি, যদি কেউ গোপনে করে থাকে তবে তা ভিন্ন কথা। তারা পদত্যাগ করবে তা আমাকে অবগত করেনি। সংগঠনে অনিয়ম থাকলে তারা প্রতিবাদ করতে পারতো। কিন্তু তা তারা করেনি। এখন সংগঠন তাদের ভালো লাগছে না। তাই সাধারণ অভিযোগ দিয়ে এখন দল থেকে বের হয়েছে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।"
 

Mily

×