ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য!

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ৩ জুন ২০২৫

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য!

ছবি:সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যকে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায়’ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে গত ২ জুন দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, এখনকার হুমকি স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও অনিশ্চিত।

 

 

স্টারমারের ভাষায়, “সংঘাত প্রতিরোধের সেরা উপায় হলো তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া।” তিনি বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ, নতুন পারমাণবিক হুমকি, প্রতিদিনের সাইবার আক্রমণ এবং ব্রিটিশ জলসীমা ও আকাশসীমায় রুশ আগ্রাসন এই সংকটের বাস্তব প্রমাণ।

 

 

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তার ঘোষণায় প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল বিনিয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে:

*১২টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন নির্মাণের পরিকল্পনা
*পারমাণবিক অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ
*সাত হাজার দূরপাল্লার অস্ত্র সংগ্রহ
*নতুন সাইবার কমান্ড গঠন এবং ডিজিটাল সক্ষমতায় এক বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়
*ড্রোন নির্মাণ এবং গোলাবারুদ মজুত বৃদ্ধির উদ্যোগ
*সেনাসদস্যদের আবাসন উন্নয়নে অতিরিক্ত ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়

 

 

স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যয় ধাপে ধাপে জিডিপির ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এই ব্যয়ের অর্থের অংশ আসবে বিদেশি সাহায্যের খরচ কমিয়ে। তবে, জিডিপির ৩ শতাংশে পৌঁছানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা তিনি নির্ধারণ করেননি।

 

 

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ‘এইউকেইউএস’ জোটের অংশ হিসেবে নতুন সাবমেরিন নির্মাণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলে প্রতিরোধ কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়। এই উদ্যোগ *চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে বলে সরকারের আশা।

এ ছাড়া, প্রতিরক্ষা কৌশল পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জর্জ রবার্টসন পর্যালোচনায় পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের ওপর আমেরিকান পারমাণবিক ছায়ানির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

 

 

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি মাইক মার্টিন মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাজ্য এখন পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না, এবং পারমাণবিক যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব এই অবস্থার প্রতিফলন।

স্টারমারের কৌশল ঘোষণার সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার অভ্যন্তরে বিমানঘাঁটিতে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এই পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্টারমারের এই প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা শুধু যুক্তরাজ্যের সামরিক আধুনিকায়নের পথই দেখায় না, বরং এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার দিকেও ইঙ্গিত কর, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ক্রমেই নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

আঁখি

×