ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পশুরহাটে ভেটেরিনারি সেবা: কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৩ জুন ২০২৫

পশুরহাটে ভেটেরিনারি সেবা: কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

কথায় আছে—“কাজীর গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই।” ঠিক এমন চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ঈদুল আজহার পশুরহাটে ভেটেরিনারি সেবা কার্যক্রমে। প্রতিবছর কোরবানির আগে নিরাপদ ও সুস্থ পশু বাজারজাতকরণ এবং পশুর বর্জ্য অপসারণে নির্দেশনা দেওয়া হলেও, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সব কিছু যেন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে নেই কার্যকারিতা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ২৯টি পশুরহাটে ৮টি মনিটরিং দল গঠন করা হয়েছে বাজার তদারকির জন্য। কিন্তু বাস্তবে এসব দলের উপস্থিতি বা কার্যক্রম প্রায় অনুপস্থিত। দল গঠন করা হলেও কার্যত তা কেবল কাগজে-কলমে বিদ্যমান। ফলে পশুর স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই।

গত ৩১ মে উপজেলার নাজিরহাট বাজারে কোনো ধরনের ভেটেরিনারি সেবা কার্যক্রম দেখা যায়নি। ২ জুন উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাজারেও ছিল একই অবস্থা। অথচ রাত পর্যন্ত সেখানে প্রচুর পশু বেচাকেনা হয়েছে। একই দিন চামারদিঘি অস্থায়ী বাজারে সরেজমিনে গিয়ে ভেটেরিনারি হাসপাতালের কোনো টিমের সদস্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও পশু সেবার কার্যক্রম পরিচালনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনেকে ফোন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিবিরহাট বাজারের গরু বিক্রেতা মো. সমির বলেন, ‘একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো চিকিৎসককে পাইনি। পরে একজন গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে গরুটিকে সুস্থ করি। তবে ততক্ষণে আরেকটি গরু রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।’

নাজিরহাট বাজারের গরু বিক্রেতা মো. আকবর আলী বলেন, ‘ভেটেরিনারি হাসপাতালের টিমকে বাজারে কোনোদিনই দেখিনি। মাঝে মধ্যে আসে শুনেছি, তবে তখনও ৫০০-১০০০ টাকা নিয়ে নামমাত্র সেবা দেয়। চরম অবহেলায় আমাদের পশুগুলোর দিন কাটে।’

মনিটরিং দলের সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজারে টহলে থাকি। তবে অনেকেই আমাদের চিনতে পারেন না বা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। আমরা কাজের বিষয়ে সচেতন।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মমিন বলেন, ‘আমাদের দপ্তরে লোকবল কম। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি পশুরহাটে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু রাখতে। গঠিত ৮টি দল তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মাঠকর্মীদের অবহেলার কিছু অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এটি চরম অন্যায়। সরকারের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনটি করতে পারেন না। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সজিব

×