ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হাসপাতাল আছে, সেবা নেই: ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

বিপ্লব হাসান হৃদয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৩ জুন ২০২৫

হাসপাতাল আছে, সেবা নেই: ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

ছবি: জনকণ্ঠ

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় নির্মিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের আট মাস পার হলেও এখনও চালু হয়নি। সব নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও আইনি জটিলতায় থমকে আছে হাসপাতালটির কার্যক্রম। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবার জন্য দুর্ভোগে পড়েছেন।

মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে পুরোনো হাসপাতালের কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার বিপক্ষে আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় স্থানীয় একটি পক্ষ। এতে আটকে যায় নতুন ভবন উদ্বোধনের কার্যক্রম।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই হাসপাতালটি। চারতলা মূল ভবনের সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসক-নার্সদের আবাসনসহ আরও পাঁচটি সহায়ক ভবন। হাসপাতালটিতে রয়েছে আইসিইউ, প্যাথলজি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য সুবিধাও। গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের জন্য নির্ধারিত থাকলেও মুলফৎগঞ্জ এলাকার একটি পক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় উদ্বোধন স্থগিত হয়ে যায়।

২০১৮ সালে পদ্মা নদীর ভাঙনে মুলফৎগঞ্জ এলাকার পুরোনো হাসপাতালের মূল ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে জরুরি ভিত্তিতে পাশের সরকারি কোয়ার্টারে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা চালু রাখা হয়। বর্তমানে সেখানে ৫০ শয্যার স্থলে মাত্র ২৫টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও কক্ষ সংকটে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্যাথলজি ও অপারেশন থিয়েটারও চলছে সীমিত পরিসরে।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী আশ্রাফুন নাহার আশা বলেন, “বর্তমানে চিকিৎসকদের কোয়ার্টারে অফিস চলছে। স্থান সংকটের কারণে অফিস সরঞ্জাম ঠিকভাবে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ভবনে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।”

হাসপাতালের এক কর্মচারী আলাউদ্দিন জানান, “হাসপাতালের সেবার মান হ্রাস পেয়েছে। এর জন্য চিকিৎসক বা নার্স দায়ী নন। মূল সমস্যা স্থান সংকট।”

স্থানীয় বাসিন্দা শাহালম মাদবর বলেন, “নতুন ভবন থাকলেও সেটি চালু না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও ব্যয়—দুটোই বাড়ছে।”

আরেক বাসিন্দা ইমন মাদবর বলেন, “নতুন হাসপাতালে আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে, অথচ মানুষ তা পাচ্ছে না। এটি অবিলম্বে চালু হওয়া উচিত।”

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল জমাদ্দার বলেন, “পুরোনো ভবনে জায়গা সংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। নতুন ভবনে সব আধুনিক সুবিধা প্রস্তুত রয়েছে। তবে স্থানীয় একটি পক্ষ কার্যক্রম স্থানান্তরের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে রিট করেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

নতুন হাসপাতাল চালু না হওয়ায় প্রায়ই উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে ছুটছেন সেবাপ্রার্থীরা। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ব্যয়। সমস্যার সমাধান করে দ্রুত হাসপাতাল চালু করার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।

আবির

×