
ছবিঃ সংগৃহীত
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ বাংলাদেশের নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নির্যাতন প্রতিরোধ ও শাস্তির জন্য প্রণীত একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইনের অধীনে দ্রুত বিচার কার্যকর করার জন্য প্রতিটি জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে।
আইনের মূল উদ্দেশ্য:
- নারী ও শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ যেমন খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, যৌতুক নির্যাতন ইত্যাদির দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
- নারী ও শিশুদের শারীরিক ও যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়া।
আইনের অপব্যবহার ও সমস্যাসমূহ:
- অনেক সময় এই আইন ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
- মামলা চলাকালে আসামি বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আসামী করা হয়, যা মানসিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে।
- মামলাগুলোর সংখ্যাও অত্যধিক হওয়ায় ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে।
- আইনজীবীদের ভুল পরামর্শ এবং চিকিৎসকের সনদের অপব্যবহার ঘটতে দেখা যায়।
মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে করণীয়:
মামলা কোথায় দায়ের হয়েছে তা নিশ্চিত করুন:
- যদি থানায় হয়, তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে এজাহারের কপি সংগ্রহ করুন।
- তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করুন।
- তালাকের কপি থাকলে সেটিও প্রদান করুন।
- পুলিশ যদি তদন্ত শেষে আসামিকে নির্দোষ দেখায়, তবে মামলাটি ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে।
জামিন সংক্রান্ত ব্যবস্থা:
- ধর্ষণ, খুন, অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধে সাধারণত জামিন দেওয়া হয় না।
- অন্য সাধারণ নির্যাতনের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া সম্ভব।
- মামলার ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়া যেতে পারে।
- জামিন না মঞ্জুর হলে পরবর্তী পর্যায়ের আদালতে আবেদন করতে হবে।
মিথ্যা মামলা প্রমাণ হলে আইনি প্রতিকার:
- নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারা ১৭(১) অনুযায়ী, মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে ভুক্তভোগী বিচারকে জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারেন।
- ফৌজদারী কার্যবিধি ২০০ ধারা মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মিথ্যা মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- মিথ্যা মামলাকারীর বিরুদ্ধে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
মিথ্যা মামলা কমানোর উদ্যোগ:
- পুলিশি তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
- তদন্তে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
- প্ররোচনাকারী আইনজীবী ও অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
- চিকিৎসার সনদ অবশ্যই সরকারি হাসপাতাল বা স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হতে হবে।
সতর্কতা:
- মামলায় উপস্থিত থাকা ও নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজিরা দেয়া জরুরি।
- অনুপস্থিত থাকলে জামিন বাতিল হতে পারে।
এই তথ্যের মাধ্যমে আপনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সঠিক ব্যবহার ও মিথ্যা মামলা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন।
মারিয়া