ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্যারোল কী? বন্দিদের যেভাবে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ৩১ মে ২০২৫

প্যারোল কী? বন্দিদের যেভাবে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়

ছবি: সংগৃহীত।

বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই—জেল বন্দিকে জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে প্যারোলে। এ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, “প্যারোল” আসলে কী? কাদের দেওয়া হয়? কী আইনি প্রক্রিয়ায় এটি কার্যকর হয়?

সম্প্রতি প্যারোলের বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশে প্যারোল সংক্রান্ত আইন, নীতিমালা ও চর্চা।

“প্যারোল” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘প্যারাবোলা’ থেকে, যার অর্থ ‘স্পিচ’। পরবর্তীতে এটি ওল্ড ফ্রেঞ্চ ভাষায় ‘parole’ শব্দে রূপ নেয়, যার অর্থ ‘ওয়াদা’ বা ‘আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি’। ১৭শ শতকে ইংরেজি ভাষায় এ শব্দটি অর্থ পায়—সুনির্দিষ্ট শর্তে বন্দিকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া।

বাংলাদেশে সাধারণ কয়েদি বা হাজতির জন্য প্যারোল সংক্রান্ত কোনো পৃথক আইন না থাকলেও ২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একটি নীতিমালা চালু করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত একমাত্র কার্যকর নির্দেশনা। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (২০১০) ও কোস্ট গার্ড (২০১৬) আইনে আলাদাভাবে প্যারোলের উল্লেখ রয়েছে কেবল সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের জন্য।

প্যারোল দেওয়া হয় কোন পরিস্থিতিতে?
নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশে শুধুমাত্র সাময়িক প্যারোল কার্যকর এবং এটি দুইটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু, আদালতের আদেশ বা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।

নীতিমালায় উল্লেখ আছে, বন্দির বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান এবং আপন ভাই-বোন—এই সাত ধরনের আত্মীয়ের মৃত্যু হলে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা যেতে পারে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিচারাধীন (হাজতি) ও সাজাপ্রাপ্ত (কয়েদি)—উভয় ধরনের বন্দিই প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে পারেন। এটি শুধুমাত্র ভিআইপি বা রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য সীমিত নয়।

সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যায়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে সরকার এই সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্যারোলে মুক্ত ব্যক্তি সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় থাকবেন এবং নির্ধারিত সময় শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) হলেন প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ। তবে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে প্যারোলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।

নীতিমালায় নির্দিষ্ট ফরমেট না থাকলেও প্রচলিতভাবে আবেদনপত্র দাখিল করা হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর। আবেদনপত্রের সঙ্গে মৃত্যুসনদ, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন সংযুক্ত করা যেতে পারে।

নীতিমালার আলোকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে প্যারোল একটি মানবিক, সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা—যা আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকে কার্যকর হয়। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা ভিআইপি নয়, যেকোনো বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত বন্দির প্রয়োজনে প্রযোজ্য হতে পারে।

সূত্র: https://short-link.me/-lde

মিরাজ খান

আরো পড়ুন  

×