ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বড় পরিবর্তন আসছে কর খাতে  সর্বোচ্চ জোর রাজস্ব আহরণে

কাওসার রহমান

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ৩১ মে ২০২৫

বড় পরিবর্তন আসছে কর খাতে  সর্বোচ্চ জোর রাজস্ব আহরণে

.

রাজস্ব খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোনো মূল্যে রাজস্ব আয় বাড়ানো। তবে এই রাজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে জনমনে স্বস্তি আসে। কর ছাড়ের মতো সুবিধা তুলে দিয়ে শুল্ক কাঠামোয় একটি শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে চাইছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন, মাত্র ৭.৪ শতাংশ। 
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ঋণের কিস্তি ছাড়ের জন্য এই হার বৃদ্ধির শর্ত রয়েছে। তাছাড়া রাজস্ব ঘাটতিও বাজেট ব্যবস্থাপনার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া স্বাবলম্বী অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশের জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধি জরুরি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অর্থ উপদেষ্টা তার রাজস্ব বাজেট সাজিয়েছেন। শুল্ক ও কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন।  
এই কর সংস্কারগুলো একদিকে যেমন সরকারের আয়ের ভা-ার জোরদার করবে, তেমিন ব্যবসায় পরিবেশ ও কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে। কর ব্যবস্থার এই পরিবর্তন সাধারণ মানুষের ওপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কর ফাঁকি ও কালো টাকার প্রবাহ কমানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 
আগামী বাজেটেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। এনবিআরের রাজস্ব আহরন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.৬ শতাংশ বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরের মূল্য অস্ত্র হবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। বর্তমানে ভ্যাট ব্যবস্থায় অসমতা রয়েছে। তাই নতুন বাজেটে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে আসন্ন বাজেটে কর বাড়ানোর চেয়ে করদাতাদের স্বস্তি দেওয়ার দিকে নজর বেশি থাকবে। পাশাপাশি কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হবে।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে ॥  বর্তমানে দেশে ব্যক্তিগত আয়ের করমুক্ত সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হলেও, নতুন বাজেটে প্রতিটি কর স্লাব বাড়িয়ে মোট করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। এর ফলে সাধারণ করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। বর্তমানে ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ধাপে ধাপে কর ধার্য করা হয়; তবে আগামী বাজেটে প্রতিটি কর স্লাব বৃদ্ধি পেলে আয়কর বোঝা কিছুটা কমে আসবে।
সর্বোচ্চ করহার বাড়ছে ৩০ শতাংশে ॥ এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত আয়কর হার ছিল ২৫ শতাংশ। তবে এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরেই ধনী ব্যক্তিদের ওপর করহার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। গত কয়েক বছরের বাজেটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নানা কারণে তা কার্যকর হয়নি। এবারই সরকার এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। অর্থাৎ ধনীরা আগামী বাজেটে আগের চেয়ে বেশি কর দিতে বাধ্য হবেন।
ন্যূনতম কর বাড়ছে ॥ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ন্যূনতম করের হার ভিন্ন। ঢাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ৩ হাজার টাকা। নতুন বাজেটে এই পার্থক্য বাতিল করে দেশের সব জায়গায় ন্যূনতম করের হার ৫ হাজার টাকা করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কর ব্যবস্থায় সমতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নিত্য পণ্য আমদানিতে কমছে উৎসে কর ॥ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে।

ডেইরি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে করছাড় বাতিল ॥ দেশের ডেইরি, পোলট্রি এবং মৎস্য খাত দীর্ঘদিন ধরেই করছাড় ভোগ করে আসছে, যেখানে সর্বোচ্চ করহার মাত্র ১৫ শতাংশ। এই করছাড়ের সুযোগে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে মৎস্য খাতের উদ্যোক্তা সেজে কর কম দিয়ে নিজেদের আয়ের পরিমাণ হ্রাস করে দেখান। এই ধরনের কর ফাঁকি প্রতিরোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে এবং আগামী বাজেটে এসব খাতে করছাড় তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখছে। এর ফলে এই খাতগুলো থেকে আয়কর আদায় সাধারণ ব্যক্তিদের করহারের মতো ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
কালো টাকা সাদায় বাড়ছে কর ॥ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ আয়কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এতে ব্যক্তিবিশেষ এবং প্রতিষ্ঠান তাদের গোপন সম্পদ বৈধ করতে পেরেছেন। তবে বর্তমান সরকার ওই সুযোগ বাতিল করে দিয়েছে। শুধু বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই সুবিধা সীমিত পরিমাণে বজায় থাকবে, তবে সেখানে করের হার বাড়ানো হবে। ফলে ভবিষ্যতে কেউ কালো টাকা সাদা করতে গেলে আরও বেশি কর দিতে হবে।
টার্নওভার কর দ্বিগুণ বাড়তে পারে ॥ অন্যদিকে, ব্যবসায় টার্নওভার কর প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে বছরে ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার সম্পন্ন ব্যবসাগুলোর ওপর ০.৬ শতাংশ ন্যূনতম কর ধার্য করা হয়। আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। মোবাইল অপারেটর, সিগারেট ও তামাক প্রস্তুতকারকদের ন্যূনতম কর আগের মতোই থাকবে। ব্যবসায় লোকসান হলেও টার্নওভার কর দিতে হয়, যা ব্যবসায়ীদের জন্য এক ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত।
করপোরেট কর ছাড় শিথিলের সম্ভাবনা ॥ করপোরেট কর ছাড়ের জন্য আরোপিত নগদ লেনদেনের শর্ত শিথিল করার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নগদ লেনদেন কমানোর উদ্দেশে শর্ত দেওয়া হয়, যাতে কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের আয়ের ব্যাংক ট্রান্সফার করতে হয়। বর্তমানে নগদ লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের চাপে। ভবিষ্যতে শর্ত শিথিল হলে করপোরেট করের হার বজায় রেখে কর আদায় সহজ হতে পারে।
অ্যাসেসমেন্টের বিধান ফিরতে পারে ॥ করদাতাদের হয়রানি কমানোর জন্য গত অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এই কারণে কর আদায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আগামী বাজেটে এই বিধান পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে আয়কর আদায় প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হয়।
আরও ১০০ পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ১০০ পণ্যে দেশটিকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার এবং দেশটির বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক কমাতে আসন্ন বাজেটে আরও ১০০টি মার্কিন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন পাওয়া গেছে। 
রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, আইনত দেশভিত্তিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুযোগ না থাকলেও প্রস্তাবিত তালিকায় ১৬১টি পণ্য রয়েছে, যার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। রাজস্ব আদায়ের ওপর যাতে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি রয়েছে।সহজ হচ্ছে সঞ্চয়পত্র কেনা ॥ উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। সঞ্চয়পত্র ভেঙে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।
বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষরা। এবার পাঁচ লাখ বা তার বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নিতে পারে সরকার। নতুন বাজেটে এ সুযোগ রাখা হতে পারে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আরও সহজ হবে।
এ ছাড়া ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি মেয়াদি আমানত খুলতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও উঠিয়ে নিতে পারে সরকার। 
শুল্কমুক্ত ২০০ আমদানি পণ্যে বসছে অগ্রিম কর ॥ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করা এবং খরচ বাড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আসন্ন বাজেটে পূর্বে করমুক্ত প্রায় ২০০টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের পরিকল্পনা করেছে। ধাপে ধাপে করছাড় তুলে নেওয়া এবং কর পরিপালন বাড়ানোর অংশ হিসেবে নেওয়া এই পদক্ষেপ থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমদানিতে অগ্রিম কর বাড়ছে ২.৫ শতাংশ ॥ আসন্ন ২০২৫-২৬ বাজেটে বাণিজ্যিক আমদানির ওপর অগ্রিম কর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হতে পারে। রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ভ্যাট আদায়ে চলমান অনিয়ম ও ফাঁকি পুষিয়ে নিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও এ কর বৃদ্ধির প্রস্তাব ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারকর্মীদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, এ সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন পণ্যের দামে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে। এছাড়া, শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত ৩ শতাংশ অগ্রিম কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে।
এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার ॥ চাহিদার তুলনায় দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ঘাটতি থাকায় প্রতিবছর বিপুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হয় সরকারকে। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। এতে এলএনজি আমদানিতে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। আমদানি পর্যায়ে এই ভ্যাট অব্যাহতির ফলে বিদ্যুৎ, শিল্পের উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমতে পারে। ফলে কমবে সরকারের ব্যয়। 
প্লাস্টিক পণ্য, এসি, ফ্রিজের ভ্যাট দ্বিগুণ হচ্ছে ॥ আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র, তৈজসপত্রসহ সব ধরনের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। একইভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ও ফ্রিজের ভ্যাট হার দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
এসব পণ্যে  বর্তমানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এই ভ্যাট বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ১৫ শতাংশ করা হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে বিক্রি কমে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। এর বিপরীতে মাটি ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হবে। এসব পণ্যে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। 
কমছে সম্পত্তি নিবন্ধনের ফি-করহার ॥ আগামী অর্থবছর থেকে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমাবে সরকার। এই বড় কর্তনের পাশাপাশি মৌজা মূল্য থেকে সরে এসে বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এ লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে এই বিধিমালায় নতুন বিধান সংযোজন করে মৌজা মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার।  বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি রয়েছে। আগামী অর্থবছর এটি কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।
অর্ধেক হচ্ছে গেইন ট্যাক্স ॥ বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরও অপরিবর্তিত থাকবে। তবে স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করতে পারে এনবিআর। স্থানীয় সরকারের আয়ে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য বিদ্যমান স্থানীয় সরকার করহার অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে স্থানীয় সরকার কর রয়েছে।
জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের সময় গেইন ট্যাক্স বা উৎসে কর সকল ক্ষেত্রে অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ঢাকার ক-ঘ শ্রেণির ক্ষেত্রে উৎসে কর ৮ শতাংশ, ঙ- শ্রেণির ক্ষেত্রে এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নতুন অর্থবছর তা যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৩ শতাংশ করা হতে পারে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা বাদে অন্যান্য পৌরসভার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া, পৌরসভা ব্যতীত অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎসে কর বিদ্যমান ২ শতাংশ হতে কমিয়ে ১ শতাংশ আরোপ করা হতে পারে।

প্যানেল

×