
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে মেডিটেরিনিয়ান (ভূমধ্যসাগরীয়) ডায়েট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গবেষণা বলছে, এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ–২ ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতাসহ ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, শস্য, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার কম খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে।
এক বৃহৎ পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা জানিয়েছে, এই জনপ্রিয় ডায়েট শুধু ওজন কমানোর মাধ্যমে নয়, অন্য নানা উপায়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষকদলের প্রধান ইনমাকুলাদা আগুইলেরা-বুয়েনোসভিনোস বলেন, ‘এটি আশ্চর্যজনক ছিল যে, মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট অনুসরণ করলে ওজন বা শরীরের চর্বির ভাগ যাই হোক না কেন, স্থূলতা সংক্রান্ত ক্যান্সারের ঝুঁকি কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মানে, এই সুরক্ষামূলক প্রভাবের পেছনে থাকতে পারে প্রদাহ কমানো, উন্নত মেটাবলিক স্বাস্থ্য, কিংবা খাদ্যাভ্যাস ও মাইক্রোবায়োমের পারস্পরিক প্রভাব।’
উদ্ভিজ্জ খাবার
মেডিটেরিনিয়ান ডায়েটের খাবারগুলো সাধারণত ফলমূল, শাকসবজি, শস্য, শিম-ডাল ও বাদাম ভিত্তিক। এতে অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলের গুরুত্ব বেশি। মাখন, চিনি ও পরিশোধিত খাদ্য খুব কম খাওয়া হয়।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের ডায়েটিশিয়ান লিন্ডসে ওহলফোর্ড বলেন, ‘ফাইবার পেটে পরিপূর্ণতা এনে দেয় এবং মাইক্রোবায়োমকে স্বাস্থ্যবান রাখে। উদ্ভিদজাত খাবারে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা শরীরের প্রদাহ কমায়।’
মেডিটেরিনিয়ান ডায়েটে লাল মাংস খুব সামান্য থাকে, যা সাধারণত খাবারে স্বাদের জন্য মাত্র। ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত মাছ খাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়, আর ডিম, দুগ্ধজাত ও মুরগির মাংস কম পরিমাণে খাওয়া হয়।
ওয়েস্টার্ন ডায়েটের বিপদ
ওয়েস্টার্ন ডায়েটের অধিক প্রক্রিয়াজাত খাবারে এমন রাসায়নিক ও সংযোজক থাকতে পারে যা ‘অক্সিডেটিভ ক্ষতি’ করে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, বলেন নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের অনকোলজিস্ট ড. নীল ইয়েনগার।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন যা খাব তা আমাদের শরীরের হরমোন, চর্বি ও পেশী এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলে। কম প্রক্রিয়াজাত, উদ্ভিদমুখী খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ ক্ষতিকে কমাতে বা উল্টে দিতে পারি। কিছু প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের খাদ্য ক্যান্সার থেরাপির কার্যকারিতাও বাড়াতে পারে।’
জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এই গবেষণা ইউরোপের ৪৫ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এপিক (EPIC) স্টাডি ১৯৯২ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ২৩টি কেন্দ্রে ১০টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সবচেয়ে বেশি মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট অনুসরণ করেছে, তাদের স্থূলতা-সংক্রান্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আনুমানিক ৬% কম ছিল। যদিও এটি একটি ছোট শতাংশ, বড় জনসংখ্যায় এটি অনেক ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
আগুইলেরা-বুয়েনোসভিনোস বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্তরে সামান্য ঝুঁকি হ্রাস হলেও, জনসংখ্যার ওপর প্রয়োগ করলে হাজার হাজার ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। মেডিটেরিনিয়ান ডায়েটের প্রচার সাশ্রয়ী, এটি অনুসরণ সহজ ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”
গবেষণায় দেখা গেছে মাঝে মাঝে ডায়েট থেকে একটু বিচ্যুত হওয়াও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক, তবে সম্পূর্ণ ডায়েট অনুসরণের তুলনায় কম। ড. ইয়েনগার বলেন, “অর্থাৎ মাঝে মাঝে ‘চিট মিল’ করলেও চলবে। ডায়েটের সুরক্ষামূলক প্রভাব ধূমপায়ীদের মধ্যে আরও বেশি ছিল, সম্ভবত কারণ তাদের ঝুঁকি স্বাভাবিকের থেকে বেশি।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
রাকিব