ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ওয়ারিশ সম্পত্তির ঝামেলা এড়াতে করণীয়—এক নজরে জানুন সবকিছু

প্রকাশিত: ২০:০৮, ৩০ মে ২০২৫

ওয়ারিশ সম্পত্তির ঝামেলা এড়াতে করণীয়—এক নজরে জানুন সবকিছু

ছবি: সংগৃহীত।

আজকের আলোচনায় আমরা জানব—উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি (ওয়ারিশ সম্পত্তি) কি নামজারি (মিউটেশন) করতে হয়, না করলেও চলে? করতে হলে কী কী দলিল ও কাগজপত্র লাগবে এবং কীভাবে করতে হয় নামজারি—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করব।

ওয়ারিশ সম্পত্তির নামজারি কেন করতে হবে?

একজন মানুষ জীবিত থাকা পর্যন্ত তার মালিকানাধীন সমস্ত সম্পত্তি তার একক দখলে থাকে। মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে তার সন্তান, স্ত্রী, পিতা-মাতা ইত্যাদি ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন হয়।

কিন্তু এটি কাগজপত্রে সরকারি রেকর্ডে প্রতিফলিত না হলে, তারা সরকারি দৃষ্টিতে মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পায় না। ফলে:

  • খাজনা পরিশোধ করতে পারেন না,
  • জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন না,
  • ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নামজারি না করলে কী সমস্যা?

  • সম্পত্তি সরকারি খতিয়ানে মৃত ব্যক্তির নামেই থেকে যাবে।
  • ভবিষ্যতে সন্তানেরা বা উত্তরসূরিরা জমি নিয়ে দাবি বা বিরোধ করতে পারে।
  • অবিভক্ত সম্পত্তির কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, হস্তান্তর বা উন্নয়ন কাজ আটকে যেতে পারে।
  • সরকারিভাবে পৃথক মালিকানা প্রমাণ করা যাবে না।

নামজারি করতে হলে যা যা লাগবে:
১. ওয়ারিশ কায়েম সনদ
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়রের কাছ থেকে নিতে হবে।

এতে মৃত ব্যক্তির সকল উত্তরাধিকারীর নাম, সম্পর্ক ও বয়স উল্লেখ থাকবে।

২. ডেথ সার্টিফিকেট
মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সরকারি সনদ (মৃত্যু নিবন্ধন সার্টিফিকেট)।

৩. আপোষ বণ্টননামা দলিল (অফস বন্টননামা)
সকল ওয়ারিশ একত্রে বসে সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে, সেটা লিখিতভাবে নির্ধারণ করেন।

এটি দলিল লেখকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে হয়।

প্রত্যেক ওয়ারিশ একটি করে সার্টিফাইড কপি রাখতে পারেন।

৪. সম্পত্তির পূর্ববর্তী দলিলসমূহের ফটোকপি
যেমন: ক্রয়সূত্রের দলিল, খতিয়ান, নামজারি কাগজ, রেকর্ড।

এতে মালিকানার ধারাবাহিকতা প্রমাণ হয়।

৫. জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন
আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য।

৬. পাসপোর্ট সাইজ ছবি (১ কপি)
৭. রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বর
যাতে ভূমি অফিস থেকে এসএমএস আসে আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে।

কোথায় ও কীভাবে আবেদন করবেন?
➤ অনলাইনে আবেদন:
www.land.gov.bd অথবা https://mutation.land.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

যদি নিজে না পারেন, উপজেলা ভূমি অফিসে থাকা আউটসোর্সিং কম্পিউটার অপারেটরদের সহযোগিতা নিতে পারেন।

➤ আবেদনের পর:

  • ভূমি অফিস থেকে একটি মেসেজ আসবে।
  • নির্দিষ্ট দিনে মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে হবে।
  • নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে, যাচাই-বাছাই শেষে নামজারি সম্পন্ন হবে।

অতীতের অবিভক্ত সম্পত্তিও এখন নামজারি করা সম্ভব?
হ্যাঁ, যদি ৩০-৪০ বছর আগে পিতা-মাতার মৃত্যু হয়ে থাকে এবং এখনো নামজারি বা বণ্টন করা না হয়ে থাকে, এখনো আপোষ বণ্টননামা করে নামজারি করা সম্ভব। এটি করলে ভবিষ্যতে উত্তরসূরিদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হবে না।


ওয়ারিশ সম্পত্তি হোক বা ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত জমি হোক, নামজারি করা বাধ্যতামূলক। এটি করলে:

  • সরকারিভাবে মালিকানা স্বীকৃতি পাবেন,
  • খাজনা দিতে পারবেন,
  • বিক্রি বা হস্তান্তর সহজ হবে,
  • উত্তরসূরি বা পরিবারের মধ্যে ঝামেলা এড়ানো যাবে।

তাই আজই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নামজারি করে ফেলুন। নিজের সম্পত্তির উপর নিজের নামটি থাকুক, এটা আপনার অধিকার।

নুসরাত

×