ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২০২৫ সাল উপযোগী সিভি সাজানোর ১০টি গোপন কৌশল, সিভিতে দেয়া সময় হবে আপনার সেরা বিনিয়োগ!

প্রকাশিত: ০১:০৬, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:০৭, ১ জুন ২০২৫

২০২৫ সাল উপযোগী সিভি সাজানোর ১০টি গোপন কৌশল, সিভিতে দেয়া সময় হবে আপনার সেরা বিনিয়োগ!

ক্যারিয়ার গড়ার পথে সঠিক সিভি লেখা আজকের কর্মবাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। ২০২৫ সালে চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতা আগের তুলনায় অনেক কঠিন ও জটিল হয়ে উঠেছে। এই কঠিন পরিসরে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরার জন্য সময় ও মনোযোগ দিয়ে একটি শক্তিশালী সিভি প্রস্তুত করাই আপনার প্রথম ও সেরা হাতিয়ার।

চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আপনার সিভি একটি ব্যক্তিগত বিপণনপত্রের মতো কাজ করে। এটিকে শুধুমাত্র একটি কাগজ মনে না করে, আপনার ক্যারিয়ারের একটি মূল্যবান বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সঠিক কৌশল অনুসরণ করে এবং নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় যদি আপনি আপনার সিভি প্রস্তুত করেন, তাহলে ২০২৫ সালে আপনার পছন্দের চাকরি পাওয়া অনেক সহজ হয়ে উঠবে।

বর্তমানে অধিকাংশ চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ায় অ্যাপ্লিকেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম বা ATS ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি আপনার সিভির মধ্যে থাকা বিশেষ শব্দ বা ‘কিওয়ার্ড’ খুঁজে তা চাকরির বিবরণ অনুযায়ী যাচাই করে। তাই সঠিক শব্দ নির্বাচন না করলে আপনার সিভি সহজেই এ টেকনোলজির ঝলকে হারিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ভিত্তিক সরঞ্জামগুলোর মাধ্যমে সিভি যাচাই হলেও মাঝে মাঝে কিছু পক্ষপাতমূলক ফলাফলও আসতে পারে, যার ফলে যোগ্য প্রার্থীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়তে পারেন। তাই শুধুমাত্র প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে না থেকে নিজে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

সিভি লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান টিপস অনুসরণ করলে আপনি চাকরিদাতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হবেন। প্রথমত, নতুন চাকরির জন্য আবেদন শুরু করলে পূর্বের সিভি থেকে সম্পূর্ণ নতুন করে শুরু করুন। পুরনো সিভির মধ্যে অতিরিক্ত তথ্য যোগ করলে পাঠকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সিভি প্রস্তুত করার সময় যিনি পড়বেন তাকে মনে রাখুন। আপনার সিভি কি তারা পছন্দ করবেন? আপনি কি সেই চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন? একবারই আপনার সিভি দেখা হবে, তাই সাবধানে তৈরি করুন।

দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য একটি বিশেষ বিভাগ রাখুন, যেখানে আপনার কৌশলগত ও যোগাযোগ দক্ষতা স্পষ্ট হবে। এটি নিয়োগকর্তাদের দ্রুত মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এছাড়া, আপনার ক্যারিয়ারে গ্যাপ বা কাজের পরিবর্তন থাকলে তা সুষ্ঠুভাবে ব্যাখ্যা করুন যাতে তারা ভুল ধারণায় না থাকে। প্রোফাইল হেডার অংশটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করুন; এটি আপনার অর্জন এবং নতুন চাকরিতে আপনি কীভাবে অবদান রাখতে পারেন তা সংক্ষেপে বলার সুযোগ।

অপ্রাসঙ্গিক বা স্বল্প মেয়াদী কাজের বর্ণনা কমিয়ে আনা উচিত যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি পাঠকের মনোযোগ থাকে। প্রতিটি অভিজ্ঞতার শুরুতেই শক্তিশালী ক্রিয়া পদ ব্যবহার করুন যেমন ‘পরিচালিত’, ‘উন্নত’, ‘বাস্তবায়িত’ ইত্যাদি, যা সিভিকে জীবন্ত করে তোলে। সিভির বিষয়বস্তু অবশ্যই চাকরির বিবরণ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার সঙ্গে মেলাতে হবে, কারণ অনেক সময় AI বা নিয়োগকর্তা সুনির্দিষ্ট কিওয়ার্ড খুঁজে দেখেন। এছাড়া, আপনার অর্জনকে সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন করুন যেমন ‘বছরে ১৫ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধি’ অথবা ‘৯৭ শতাংশ গ্রাহক ধরে রাখা’ ইত্যাদি।

সিভির বিন্যাস, ফন্ট, বানান ও উপস্থাপনায় খুঁটিনাটি ভুল যেন না থাকে তা নিশ্চিত করুন। সঠিক বিন্যাসে লেখা সিভি দ্রুত পড়া যায় ও প্রভাব ফেলে। নিজের কৃতিত্ব ও সফলতাগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করুন। অনেকে নিজের প্রচেষ্টা প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু সাফল্যের গল্প না বললে নিয়োগকর্তা অনুমান করবে না আপনি কতটা যোগ্য।

যদি কোনো যোগ্যতা এখনও অর্জিত না হয়ে থাকে কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, তাহলে সেটি উল্লেখ করুন। উদাহরণস্বরূপ, “পরবর্তী পদে আমার লক্ষ্য CIPD সার্টিফিকেশন অর্জন করা” এরকম একটি লাইন যোগ করলে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন আপনি আগ্রহী এবং সচেতন।

AI প্রযুক্তি সিভি লেখায় সহায়ক হলেও এটি পুরোপুরি নির্ভর করার জায়গা নয়। AI থেকে পাওয়া টেক্সট অবশ্যই নিজে যাচাই-বাছাই ও সম্পাদনা করতে হবে যেন তা প্রাসঙ্গিক ও যথার্থ হয়। একাধিক বার প্রত্যাখ্যান বা নীরবতা দেখা দিলে হতাশ না হয়ে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিন। ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করুন এবং আপনার সিভি উন্নত করুন।

শিল্প ও পেশাগত যোগাযোগ বাড়াতে নেটওয়ার্কিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিঙ্কডইন, ইন্ডাস্ট্রি ইভেন্ট ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপকারী তথ্য ও চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়া, আপনাকে বুঝতে পারে এমন এবং ক্যারিয়ার লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক কাজের সন্ধান দেয় এমন রিক্রুটারদের সঙ্গে কাজ করা আপনাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সঠিকভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।

সুতরাং ২০২৫ সালে, আপনার সিভি তৈরিতে সময় ও মনোযোগ বিনিয়োগ করুন। প্রতিটি আবেদন অনুযায়ী সিভি কাস্টমাইজ করুন এবং নিয়মিত পর্যালোচনা ও সংশোধন করুন। সঠিক প্রস্তুতি ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা আপনাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে এবং স্বপ্নের চাকরির দ্বার উন্মুক্ত করবে।

সফল ক্যারিয়ারের জন্য আজ থেকেই শুরু করুন আপনার সিভির যত্ন। আপনার লক্ষ্য পূরণে এটি হবে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

 


সূত্র: https://tinyurl.com/3t5ht9b8

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×