
বিশ্বের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিজস্ব কারখানায় স্মার্টফোন তৈরি বর্তমানে আর খুব একটা দেখা যায় না। অ্যাপল ও গুগল বহু আগেই নিজস্ব কারখানা বাদ দিয়ে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে, অপারেশনাল ব্যয় হ্রাস পায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন সহজেই বাড়ানো বা কমানো যায়। এবার সেই পথেই হাঁটছে প্রযুক্তি জায়ান্ট সোনি।
বিশ্বস্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জিএসএমএরিনা জানিয়েছে, সোনি তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোন তৈরির দায়িত্বও তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিচ্ছে। আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের মিডরেঞ্জ ফোনের উৎপাদন অন্য কোম্পানির মাধ্যমে চালাত। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো এক্সপেরিয়া সিরিজের ফ্ল্যাগশিপ মডেলও। সম্প্রতি বাজারে আসা ‘Sony Xperia I VII’ মডেলটি এই নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রস্তুত করা হয়েছে।
এটি নিছক কোনও ব্যতিক্রম নয় বরং সোনির পক্ষ থেকে একটি বড় কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এখন থেকে প্রতিষ্ঠানটি আর কোনও স্মার্টফোন নিজস্ব কারখানায় তৈরি করবে না। যদিও এখন পর্যন্ত মান বা ফিচার নিয়ে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ শোনা যায়নি, তবে এটি সোনির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে মার্কিন বাজার থেকে সোনি কার্যত বিদায় নিয়েছে আগেই। একসময় সনি এক্সপেরিয়ার ফোনগুলো সেখানে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা এনে দিত। বিশেষ করে তাদের পেশাদার মানের ক্যামেরা ফিচার ও ৪কে ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহারকারীদের ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা দিত। সেইসঙ্গে উচ্চ অ্যাসপেক্ট রেশিওর কারণে সিনেমা দেখার জন্য ছিল উপযুক্ত। এমনকি মিডরেঞ্জ ফোনের মধ্যেও সোনির এক্সপেরিয়া জেড৩ কমপ্যাক্ট-এর মতো কিছু মডেল ছিল প্রশংসিত।
তবে উচ্চমূল্যের কারণে সোনির ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলো বরাবরই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যবহারকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। তাই উৎপাদন খাতে খরচ বাঁচাতে ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্কেলিং সুবিধা পেতে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে উৎপাদন করানো সোনির জন্য যথাযথ সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই পরিবর্তনের ফলে এখন শুধু স্যামসাং-ই একমাত্র বৈশ্বিক অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে রয়ে গেল যারা নিজস্ব কারখানায় ফোন তৈরি করে। স্যামসাং ইতিমধ্যেই নিজস্ব উৎপাদনে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে এবং উৎপাদন সক্ষমতাও যথেষ্ট, যা কোম্পানিটির জন্য একটি বড় সুবিধা।
সোনির মার্কিন বাজার থেকে সরে যাওয়া প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্য একটি দুঃখজনক দিক বলেই মনে করেন অনেক ব্যবহারকারী। বিশেষ করে ফ্ল্যাগশিপ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে এখন বাজারে বিকল্প খুবই সীমিত। সনি যেহেতু ভিডিও প্রোডাকশন উপযোগী কিছু ফোন বাজারে এনেছিল, তাই এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই হতাশাজনক। যদিও অনেকে আশা করছেন উৎপাদনের এই রূপান্তর সোনিকে নতুন করে ফিরে আসার পথ করে দিতে পারে, তবে বাস্তবতা বলছে সেই প্রত্যাবর্তন এখনও অনিশ্চিত।
প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তনের সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে নিজেদের অস্তিত্ব ও লাভজনকতা ধরে রাখতে। সোনির এই পদক্ষেপ সেই ধারারই একটি অংশ। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে সনি তাদের পুরনো গৌরব ফিরে পেতে পারবে কি না।
সূত্র:https://tinyurl.com/28d3byx2
আফরোজা