
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বার নির্বাচনে সভাপতি সেক্রেটারির পদসহ ৫ টি পদে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর জয় লাভে ব্যাপক তোলপাড় চলছে সারাদেশব্যাপী। বিশেষ করে গাজীপুরে সকল রাজনৈতিক মহলে চলছে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কি এমন যাদুতে জামায়াত ইসলামীর এমন জয়লাভ? বিএনপিইতো পাশ করবে এমন অতি আত্মবিশ্বাস কাল হয়েছে বিএনপি প্রার্থীদের!
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ নির্বাচনে ১৬টি পদের মধ্যে সভাপতি/সাধারন সম্পাদকসহ পাঁচটি পদে জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেল নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জামাতের আলহাজ্ব মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জামায়াতের সমর্থিত মোট পাঁচজন নির্বাচিত হয়ে গাজীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রথমবারের মত চমক সৃষ্টি করেছেন। জামায়াত থেকে অন্য নির্বাচিতরা হলেন
সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন আকবরী, সদস্য আব্দুর রহিম ও মাহদী হাসান।
১৬ জনের মধ্যে প্যানেলের বাকী ১১ জন বিএনপি সমর্থিত বিজয় লাভ করেছেন। বিএনপি সমর্থিতদের মধ্যে সহ- সভাপতি আব্দুল হামিদ, কোষাধক্ষ্য মো: আবুল কালাম আজাদ, লাইব্রেরী সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান রাসেল, অডিটর রবিউল আলম, সাংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ সালাহ্ উদ্দিন খান অপু, মহিলা সম্পাদিকা আজিজা আক্তার, সদস্য মোঃ আসিফ রায়হান কাউসার, আশিকুর রহমান, কামরুল হাসান, ফাতেমা খান ও শ্যামল সরকার।
বিএনপি প্রার্থীর ভরাডুবিতে কেউ কেউ বলছেন, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি গাজীপুর বার নির্বাচনের মতো এমন ঘটনা ঘটে যায় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না! কেন হারলো বিএনপির প্রার্থী এমন প্রশ্নের খোঁজ নিতে গিয়ে নানা জন বলছেন নানা রকমের কথা। কেউ বলছেন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি সেক্রেটারি প্রার্থীকে গোনায়ই ধরেনি বিএনপির প্রার্থীরা। বিএনপির প্রার্থীরা তাদের নিশ্চিত পাশ ধরে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।
ওইদিকে জামায়াতে প্রার্থীরা আধাজল খেয়ে বিএনপি প্রার্থীদের ভুলগুলো সামনে এনে প্রচারণা চালিয়েছেন ভোট প্রার্থনায়। অনেকে বিএনপির গ্রুপিংকেও দায়ী করছেন এমন পরাজয়ে। গাজীপুর বার নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ার কথা ছিল সেটা লক্ষ্য করা যায়নি। এদিকে একটি পক্ষের দাবি আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররা বিএনপিকে ভোট না দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ভোট দেয়ায় এমন বিপত্তি ঘটেছে। অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের ভোটাররা বিএনপির সাথে গাদ্দারি করেছে! আর এতেই ঘটেছে বিএনপি প্রার্থীর ভরাডুবি।
গাজীপুর বার নির্বাচনে সভাপতি/সেক্রেটারি ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির পদ এখন জামায়াতের কব্জায়! এটা যেন কেউ মেনে নিতে পারছেন না! তবে বাস্তবতা হচ্ছে, গাজীপুর বার নির্বাচনে খরগোশ-কচ্ছপের দৌড় কাহিনীর মতো ঘটনা ঘটেছে। কেউ বলছেন, গাজীপুর বার নির্বাচনে জামায়াত থেকে সভাপতি সেক্রেটারির জয়লাভে রাস্ট্রিয় রাজনীতিতে একটি বড় ধাক্কা!
বিএনপির জন্য এটি একটি বড় রেড সিগনালও!
বিএনপির প্রার্থীরা নিশ্চিত পাশ মনে করে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক তৎপরতা না চালানোয় এমন বিপর্যয়। গাজীপুর বার নির্বাচনে জামায়াত থেকে সভাপতি সেক্রেটারির জয় লাভে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি বিএনপির বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করছেনা এমনও বলছেন অনেকে?
২০২৪ এর ৫ আগষ্ট বিপ্লব পরবর্তী কোন নির্বাচনে বাংলাদেশে আলোড়ন ঘটালো জামায়াতে ইসলামী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়ায় নানাজন বলছেন নানা কথা। আবদুর রহমান দুলাল তার প্রতিক্রিয়ায় বলছেন, আওয়ামী লীগের ভোটে জামায়াত প্রার্থীর এ জয়। বিএনপি নেতা এডভোকেট জিএস স্বপন প্রশ্ন রেখে বলেছেন, এর নাম আওয়ামী লীগ। তাদের বিশ্বাস করলে আগামী নির্বাচন?
মাহাদি আলম দিপু বলছেন, বিএনপির মামলাবাজ কিছু লোকের জন্য এমন পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে মামলা গ্রেফতার এসব বিএনপি জামাত ২ দলই করলেও বিএনপির ২/৪ জন এটাকে একদম মহান শিল্পে পরিনত করেছে। গাজীপুরের শীর্ষ দূর্নীতিবাজ মাদক ব্যবসায়ী খুনীদের টাকার বিনিময়ে পালানোর সুযোগ করে দিয়ে নিরীহ গোছের আওয়ামী লীগের শিক্ষক, চিকিৎসক আইনজীবী সহ নানান পেশাজীবী লোকজনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে কোটি টাকা ইনকাম করা লোকজনের মুখ দেখার পরও পাবলিক ভোট দিবে কেন সেটা বলেন?
ব্যবসায়ী মঙ্গল মিয়া বলছেন, আশ্চর্যজনক খবর, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি জামায়াতকে ভোট দেয় তবে তো খেল খতম! আলাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ছাত্র আন্দোলবের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মন মানষিকতার পরিবর্তন হয়েছে, সেটি বিএনপির নেতৃত্বের অনুধাবন করতে পারেননি, সমগ্র বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের জোয়ার, তাদের ভুল রাজনীতির খেসারত পালিয়ে যাওয়া এগুলো থেকে বিএনপি কোন শিক্ষা গ্রহণ করেননি। সমগ্র বাংলাদেশে বিএনপির চাঁদাবাজি সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচার বিএনপির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারন। শাহিন কাউছার বলছেন, দেশটা কি আবার পাকিস্তান হয়ে গেল নাকি?
কোন যাদুর বলে জামায়াতে ইসলামী জয়লাভ করলো বিস্মিত পুরো দেশবাসী! টঙ্গীর সাংবাদিক শ্রাবণ আহমেদ সুমন তার মন্তব্যে বলেছেন, আলাদিনের চেরাগ! সাংবাদিক কাজী রফিক বলছেন, ভাই, এভাবেই আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে হারিকেন ধরিয়ে সরকার গঠন করবে জামায়াতে ইসলামী। ব্যাংকার মোতালিব হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনর ট্রায়াল? আরিফুর রহমান বলছেন, মুরুব্বিরা কঠিন গেইম খেলছে।
শেখ নিজামের মন্তব্য, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটাররা জামায়াতকে ভোট দিবে! ওমর ফারুক বলছেন, বিএনপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে নির্বাচনী ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। টঙ্গীর বিএনপি নেতা আলী আহমেদ টুকু বলছেন ৪৭ বছরের ইতিহাসে এটা একটি বিরল ঘটনা। এর জন্য বিএনপি'র অযোগ্য নেতৃত্ব, ক্ষমতায় না আসতেই দাম্ভিকতা, অহংকার, দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নিবেদিত কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, সর্বোপরি সর্বক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য ,লুটপাট নিজেদের মধ্যে নগ্ন গ্রুপিং। মাত্র ২৪০০ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সম্ভবত ১৩০০ থেকে ১৪০০ ভোট কাস্ট হয়েছে ।
এই ছোট্ট একটা বারের নির্বাচন আমরা সামাল দিতে পারি না, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ এবং বিভিন্ন আসন কীভাবে আমরা সামাল দিব। এটা সবার জন্যই একটি সতর্কবার্তা। যেখানে এই ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলেও নির্বাচন করে বিএনপি জয়লাভ করেছে আর আজকে এই চরম ভরাডুবি শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে দলাদলি ও নগ্ন গ্রুপিং এর জন্য। অবশ্যই দায়িত্বশীল যারা আছে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অবশ্যই বিএনপির হাইকমান্ডকে গাজীপুরের ব্যাপারে আলাদা নজর দিতে হবে, না হলে সামনে সবার জন্যই অশনি সংকেত বিরাজ করছে!
গাজীপুর বার নির্বাচন নিয়ে নানা জনের নানা মন্তব্য আর ক্ষোভে ফুঁসছে বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য কেন্দ্রীয় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দলের অসংগতিগুলো শক্ত হাতে দ্রুত দমন না করলে গাজীপুর বার নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী বিএনপির বিপর্যয় ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রিফাত