
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের অন্যতম বড় দ্বিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চমাধ্যমিক বা এসএসসি পেরিয়ে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করা উচিত, তা ঠিক করতে না পারা। সুযোগ বাড়লেও নিশ্চিততা আসেনি। এই বাস্তবতা তুলে ধরে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক পরামর্শক ভিরাল দোশি বলেছেন, "শুধুমাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানে তারা কী পড়তে চায়, বাকি ৭০ শতাংশই দ্বিধায় থাকে।"
দিল্লিতে আয়োজিত এনডিটিভি এডুকেশন কনক্লেভে ভিরাল দোশি জানান, কোর্স বা ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পরিবার, সমাজ বা পরীক্ষার ফলাফলের চাপে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিজের আগ্রহ অনুযায়ী পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করা।
তিনি বলেন, "জীবনের পরবর্তী অংশে আসলে আপনার স্নাতক ডিগ্রিটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আপনি কিসে আগ্রহী ছিলেন সেটাই বড় ব্যাপার। আপনি যদি ভালোবেসে কোনও বিষয় পড়েন, তাহলে আপনি স্বভাবতই তাতে ভালো করবেন।"
স্নাতকে কী পড়েছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কীভাবে করছেন
ভিরাল দোশি উদাহরণ দিয়ে বোঝান, বিশ্বখ্যাত সফল ব্যক্তিরা অনেকেই তাদের স্নাতকে মূল ধারার বাইরের বিষয় পড়েছেন। যেমন, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা স্নাতকে পড়েছেন ফিল্ম স্টাডিজ। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য, আর গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই স্নাতকে নিয়েছেন মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
তাঁদের সবার স্নাতক বিষয় ছিল ভিন্ন, কিন্তু তাঁরা পরবর্তীতে বিশ্বসেরা বিজনেস স্কুল যেমন হার্ভার্ড বা ওয়ার্টন থেকে এমবিএ করে ক্যারিয়ারে সফল হয়েছেন। এই উদাহরণ দিয়েই দোশি বলেন, “আপনি স্নাতকে কী পড়লেন বা কোথায় পড়লেন, সেটি বড় কথা নয়। আসল ব্যাপার হলো, আপনি সেটি কতটা ভালোভাবে করলেন।”
শিক্ষার্থীদের জন্য চার ধাপের পথনির্দেশ
যে শিক্ষার্থীরা এখনও নিশ্চিত নন ভবিষ্যতে কোন পথে যাবেন, তাদের জন্য ভিরাল দোশি চারটি ধাপে ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার একটি সহজ পরিকল্পনা দেন-
১. সাইকোমেট্রিক টেস্ট: শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন, আগ্রহ ও সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন।
২. ক্যারিয়ার রিসার্চ: টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে উপযুক্ত পেশা ও বিষয়গুলো সম্পর্কে পড়াশোনা করা।
৩. পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা: তিনি বলেন, “যেমন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আগ্রহী হলে অন্তত তিনজন এই পেশায় থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলুন।”
৪. জব শ্যাডোয়িং: এক-দুদিন সরাসরি কোনো পেশাজীবীর সঙ্গে থেকে তাদের কাজ দেখা, যাতে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা পাওয়া যায়।
বিদেশে পড়ার আকর্ষণ কেন বাড়ছে
আলোচনায় ভিরাল দোশি বৈশ্বিক শিক্ষা প্রবণতাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রতি ১০০ জন বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, আর ২০-২৫ শতাংশ পাড়ি জমায় যুক্তরাজ্য বা কানাডায়।
এই দেশগুলোর প্রতি আগ্রহের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “তাদের গবেষণা সুবিধা উন্নত, শিক্ষকতাও বিশ্বমানের, ইংরেজি ভাষাভিত্তিক পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক সুযোগ সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে আগ্রহী হয়ে ওঠে।”
ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার নির্ধারণের সময় আত্মবিশ্বাস, নিজের আগ্রহ বোঝা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন ভিরাল দোশি। তার মতে, “সফল হতে হলে কেবল ভালো গ্রেড নয়, নিজের পছন্দকে সম্মান জানানোও জরুরি।”
এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরামর্শ হতে পারে এক নতুন আলোর দিশা। সঠিক পরিকল্পনা, আগ্রহ ও উদ্যোগ থাকলে যেকোনো শিক্ষার্থীই নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম।
সূত্র:https://tinyurl.com/ua9p3u39
আফরোজা