ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন ট্রাম্প প্রশাসন ছাড়লেন ইলন মাস্ক ?

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:১৮, ৩০ মে ২০২৫

কেন ট্রাম্প প্রশাসন ছাড়লেন ইলন মাস্ক ?

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন ধনকুবের, টেসলার সিইও ও আলোচিত উদ্যোক্তা এলন মাস্ক অবশেষে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘Department of Government Efficiency’ (DOGE)-এ বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বাজেট সাশ্রয় করতে ব্যর্থ হন তিনি।

 

একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, “আজ রাত থেকেই মাস্কের অফ-বোর্ডিং শুরু হচ্ছে।” বুধবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’-এ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান মাস্ক।

সূত্র জানায়, বিদায়ের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। বরং হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

মাস্কের বিদায়ের একদিন আগে তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্যাক্স বিল নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই বিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এটি DOGE টিমের কাজকে দুর্বল করছে।”

এই মন্তব্যে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এতে ক্ষুব্ধ হন এবং রিপাবলিকান সিনেটরদের ফোন করে প্রেসিডেন্টের অবস্থান পুনরায় ব্যাখ্যা করতে হয়।

 

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই মাস্ক হয়ে ওঠেন তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। ফেব্রুয়ারিতে CPAC সম্মেলনে তিনি লাল রঙের একটি ধাতব চেইনস দেখিয়ে বলেন, “এটাই আমলাতন্ত্র কাটার অস্ত্র।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, DOGE’র মাধ্যমে অন্তত ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় কমানো হবে। করোনা পরবর্তী সময়ের ‘টেলিওয়ার্ক’ সংস্কৃতিকে বাতিল করার মাধ্যমে সরকারি কর্মীদের স্বেচ্ছা পদত্যাগ উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন তিনি।

 

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্যাবিনেট সদস্য মাস্কের কৌশল নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। ট্রাম্প নিজেই মার্চে স্মরণ করিয়ে দেন, নিয়োগ ও বরখাস্তের চূড়ান্ত ক্ষমতা মাস্কের হাতে নয়।

তিনি দ্বন্দ্বে জড়ান পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও, যোগাযোগমন্ত্রী শন ডাফি ও অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গে। ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে তিনি “মূর্খ ও ইটের বস্তার চেয়ে বোকা” বলে আখ্যায়িত করেন।

 

এপ্রিল মাসের টেসলার এক কনফারেন্স কলে তিনি বলেন, ব্যবসার দিকে মনোযোগ দিতেই সরকারিভাবে সক্রিয়তা কমিয়ে আনবেন।

গত বছর ট্রাম্পের প্রচারে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা মাস্ক কাতারে এক ফোরামে বলেন, “আমার মনে হয় আমি যথেষ্ট করেছি। এখন রাজনীতিতে ব্যয় কমাবো।”

 

কাটা পড়েছে ২.৩ মিলিয়ন সরকারি কর্মীর ১২% জনবল

DOGE-এর অধীনে এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৬০,০০০ জন কমানো হয়েছে, যা মোট কর্মীর ১২%। ছাঁটাই, স্বেচ্ছা অবসর ও বাই-আউটের মাধ্যমে এই কাজ হয়।

মাস্ক বলছেন, “DOGE এখন শুধু একটি প্রোগ্রাম নয়, বরং সরকারের কাজের ধারার অংশ হয়ে উঠবে।”

 

ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে মাস্কের প্রভাব, বিতর্ক ও তার হঠাৎ বিদায় — এসব নিয়েই আলোচনা এখন তুঙ্গে। তার অনুপস্থিতিতে DOGE প্রকল্প কতটা কার্যকর থাকবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আঁখি

×