
কিডনি মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই শরীর স্পষ্ট করে কোনো সতর্ক সংকেত দেয় না। কিডনি আক্রান্ত হওয়ার প্রথমদিকের লক্ষণগুলো অনেক সময় এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে তা সহজেই চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি গড়ায় ভয়াবহ কিডনি ফেইলিওর পর্যন্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ রয়েছে, যা সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব।
চলুন জেনে নিই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এমনই ৬টি প্রাথমিক লক্ষণ:
১. প্রস্রাবে ফেনা বা বুদবুদ
আপনার প্রস্রাবে কি ক্রমাগত ফেনা বা বুদবুদ দেখা যাচ্ছে? তাহলে এটি হতে পারে ‘প্রোটিনুরিয়া’র লক্ষণ। সুস্থ কিডনি সাধারণত প্রস্রাবে প্রোটিন ঢুকতে দেয় না। কিন্তু কিডনি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তা গ্লোমেরুলি নামক ফিল্টারিং ইউনিট দিয়ে প্রোটিন প্রস্রাবে বের করে দেয়। খালি চোখে দৃশ্যমান এই ফেনা তাই হতে পারে বড় বিপদের পূর্বাভাস।
২. পা, গোড়ালি ও চোখের চারপাশে ফোলাভাব
যখন কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি ফিল্টার করে বের করতে ব্যর্থ হয়, তখন তা শরীরে জমে গিয়ে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। সাধারণত চোখের নিচে, গোড়ালি এবং পায়ের বিভিন্ন অংশে এই ফোলাভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখ ও মুখ ফুলে থাকা কিডনি সমস্যার অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব, বিশেষ করে রাতে
রাতে বারবার প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যাচ্ছে? এ অবস্থাকে ‘নকচুরিয়া’ বলা হয়। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে প্রস্রাব ঘনীভূত করতে পারে না। এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন পড়ে, যা হতে পারে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাসের স্পষ্ট বার্তা।
৪. ক্লান্তি ও দুর্বলতা
কিডনি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শরীরে এরিথ্রোপয়েটিন নামক হরমোনের উৎপাদন কমে যায়। এই হরমোন রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে দেহে অক্সিজেন পরিবহন ব্যাহত হয় এবং ক্লান্তি, দুর্বলতা ও নিঃশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. অনবরত চুলকানি
কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থের কারণে ত্বকে তীব্র চুলকানি দেখা দেয়। সাধারণ কোনো ক্রিম বা লোশনেও এই চুলকানি উপশম হয় না। এটি প্রায়ই রাতে আরও বেড়ে যায়, যা জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
৬. হঠাৎ ক্ষুধামন্দা
খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব কিংবা মুখে ধাতব স্বাদ সব মিলিয়ে এটি কিডনি সমস্যার একটি অগ্রগামী লক্ষণ হতে পারে। বর্জ্য জমে যাওয়ার ফলে হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, যার কারণে খাবারে অনীহা তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা গেলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে কিডনি রোগের ভয়াবহ পরিণতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। নিয়মিত পানির ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে আপনাকে রক্ষা করতে।
মিমিয়া