ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গরিবের জন্য ঈদ: আনন্দ না কি বিষাদ!

মো:হুমায়ুন ফরিদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ০২:৫২, ২ জুন ২০২৫

গরিবের জন্য ঈদ: আনন্দ না কি বিষাদ!

ঈদ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন হলেও, সমাজের এক বিশাল অংশের জন্য এ দিনটি যেন কেবলই বেদনার প্রতিচ্ছবি। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহু পরিবার ঈদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি অর্থনৈতিক অক্ষমতার কারণে।

সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর জসিম উদ্দিন (৪২) বলেন,
"পুরো রমজান মাস রোজা রেখে কাজ করেছি। আশা ছিল অন্তত ছেলেমেয়েকে নতুন কাপড় কিনে দেব। কিন্তু বাজারে সব জিনিসের দাম এত বেড়েছে—এক জোড়া স্যান্ডেল কেনাও কষ্টকর হয়ে গেছে।"

বৃদ্ধা হালিমা বেগম (৬৫), যিনি শহরের আলীনগর বস্তিতে থাকেন, কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
"স্বামী নেই, ছেলেমেয়েও নেই কেউ পাশে। প্রতিবেশীদের দয়ায় বেঁচে আছি। ঈদের দিনেও খালি পেটেই থাকি কখনো কখনো। গরুর মাংস তো দূরের কথা, ডালভাত জোটলেই আলহামদুলিল্লাহ বলি।"

স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন,
"আমাদের সমাজে সামর্থ্যবান অনেকেই কোরবানি দেন, কিন্তু সেই গোশত গরীবদের মাঝে সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ইসলাম যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলে, সেটা বাস্তবে রক্ষা করা জরুরি।"

পাবনা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো: নজরুল ইসলাম বলেন,
"আমরা প্রতিবছর গরীবদের জন্য কিছু সহায়তা করে থাকি, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।"

এদিকে, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'সহমর্মিতা'র সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু জানান,
"আমরা প্রায় ২০০ পরিবারের মাঝে ঈদের খাদ্যসামগ্রী ও পোশাক বিতরণ করেছি। কিন্তু আমাদের সাধ্য সীমিত। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসে, তাহলে কেউ ঈদের দিনে না খেয়ে থাকবে না।"

সত্যিই, ঈদ যেন তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন সমাজের প্রতিটি মানুষ একসাথে তা উদযাপন করতে পারে—বৈষম্যহীনভাবে, সম্মানের সাথে।
 

Jahan

আরো পড়ুন  

×