
ছবি: সংগৃহীত
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহতে রেড ক্রসের একটি ফিল্ড হাসপাতালে "বিপুল সংখ্যক হতাহত" মানুষের আগমন ঘটেছে, যাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ বা বোমার ধাতব টুকরোর আঘাতে আহত হয়েছেন। এ কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (ICRC)।
সংস্থাটি জানিয়েছে," ১৭৯ জন আহতের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে এবং ২১ জনকে আসার পরপরই মৃত ঘোষণা করা হয়েছে"।
এই বিবৃতি এসেছে এমন এক সময়, যখন হামাস পরিচালিত গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি দাবি করে যে, অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে—যার জন্য তারা "ইসরায়েলি গুলিবর্ষণকে" দায়ী করেছে, যা বেসামরিক মানুষের উপর চালানো হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তাদের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে তারা সাহায্য কেন্দ্রের আশেপাশে বা ভেতরে থাকা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি।
IDF একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের দাবি অনুযায়ী দেখা যায়, খান ইউনিসে সাহায্য সংগ্রহের সময় মুখোশ পরা অস্ত্রধারীরা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ছিল ও গুলি চালাচ্ছিল।
তবে বিবিসি এই ফুটেজ যাচাই করতে পারেনি, কারণ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, যার ফলে ঘটনাগুলো যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই সাহায্য কেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা Gaza Humanitarian Foundation (GHF) দাবি করেছে, তাদের কেন্দ্রের কাছে এমন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং হামাসই এসব গুজব ছড়াচ্ছে।
রেড ক্রস তাদের বিবৃতিতে বলেছে, "রাফাহতে আমাদের ফিল্ড হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত মানুষ এসেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। অধিকাংশের শরীরে গুলির চিহ্ন বা ধাতব টুকরোর আঘাত রয়েছে।"
এটি ছিল ফিল্ড হাসপাতাল চালু হওয়ার পর একই ঘটনায় সর্বোচ্চ অস্ত্রজনিত আঘাত পাওয়া রোগীর সংখ্যা, যা ৬০ শয্যার হাসপাতালের ধারণক্ষমতার অনেক বেশি বলে জানিয়েছে ICRC।
IDF বিবৃতিতে বলেছে, "গত কয়েক ঘণ্টায় কিছু মিথ্যা প্রতিবেদন ছড়ানো হয়েছে, যেখানে IDF-কে গাজার সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, IDF এমন কোনো গুলি চালায়নি এবং এই প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা।"
অন্য একটি ঘটনা ঘটে গাজার কেন্দ্রস্থলে নেটজারিম করিডরের একটি আলাদা সাহায্য কেন্দ্রে, যেখানে প্যালেস্টাইনি রেড ক্রিসেন্ট জানায়, ১৪ জন আহত হয়েছে।
বিবিসির কাছে নাসের হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তারা প্রায় ২০০ জন আহতকে পেয়েছেন, যাদের আঘাত গুলি বা শার্পনেলজনিত।
স্থানীয় সাংবাদিক ও কর্মীরা ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যায়, মৃতদেহ ও আহত ব্যক্তিদের গাধার গাড়িতে করে রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, হাসপাতালগুলোতে ২০০ জনের বেশি আহত এসেছে এবং এর মধ্যে ৩১ জন নিহত। শুধু নাসের হাসপাতালে ৭৯ জন আহত ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা Medical Aid for Palestinians।
এই সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, নিহত ও আহতদের বেশিরভাগই "সরাসরি মাথা বা বুকে গুলিবিদ্ধ" হয়েছেন।
ব্রিটিশ সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ, যিনি নাসের হাসপাতালে কাজ করছেন, এক ভিডিও বার্তায় দেখিয়েছেন যে সমস্ত শয্যা পূর্ণ এবং প্রত্যেক রোগী গুলিবিদ্ধ।
GHF (যারা সাহায্য বিতরণ করে) বলেছে, তাদের কেন্দ্রের কাছে কোনো হামলা হয়নি। তবে রাফাহর এক IDF সেনা বিবিসিকে জানায়, ইসরায়েলি সৈন্যরা ভিড়ের কাছে গুলি চালিয়েছে, কিন্তু তাদের লক্ষ্য করে নয় এবং কেউ আহত হয়নি।
রাফাহর সাংবাদিক মোহাম্মদ ঘারিব বিবিসিকে বলেছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৪টা ৩০ মিনিটে GHF পরিচালিত সাহায্য কেন্দ্রের কাছে বহু ফিলিস্তিনি জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরায়েলি ট্যাংক এসে গুলি ছোড়ে।
তিনি বলেন, “নিহত ও আহতরা দীর্ঘ সময় মাটিতে পড়ে ছিল। উদ্ধারকারী দল ঢুকতে পারেনি, কারণ এলাকা ছিল ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় বাসিন্দারা গাধার গাড়ি ব্যবহার করে মৃত ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।”
গাজার প্রধান জরুরি সেবার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল AFP-কে বলেন, "ইসরায়েলি যানবাহনের গুলিতে হাজারো নাগরিক আহত হয়েছে।"
এই ঘটনাগুলো রাফাহতে ভয়াবহ মানবিক সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে, যেখানে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে সাহায্য ও চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
শনিবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (WFP) জানায়, ক্ষুধা ও হতাশায় ভোগা মানুষজন সাহায্যবাহী ট্রাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে খাদ্য সংগ্রহ করে।
GHF হলো একটি নতুন মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থা, যারা গাজাজুড়ে নির্ধারিত স্থানে খাদ্য বিতরণ করছে।
ইসরায়েল এই পরিকল্পনা চালু করে হামাসকে সাহায্য চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর, যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
GHF দাবি করেছে, তারা এই সপ্তাহে ৪.৭ মিলিয়ন খাবার বিতরণ করেছে, তবে বিবিসি তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে।
এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪,৪১৮ জন নিহত হয়েছে।
Mily