ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিসা সংকটে ধ্বংস হচ্ছে স্বপ্ন!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৯ মে ২০২৫

ভিসা সংকটে ধ্বংস হচ্ছে স্বপ্ন!

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে লাখো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ভিসা নীতির কারণে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন ভয়াবহ অনিশ্চয়তায়। অনেকেই বলছেন, এখন আফসোস হচ্ছে যে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেছিলেন।

ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত

বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের হাতে পৌঁছানো এক সরকারি মেমোতে দেখা গেছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট সাময়িকভাবে সব শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত করেছে। কারণ, তারা এখন শিক্ষার্থী আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া আরও কড়াভাবে যাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

রাষ্ট্রদূত ট্যামি ব্রুস এই বিষয়ে বলেন, “আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি, কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। যাচাই-বাছাই আরও কঠোর হবে।”

হাভার্ড বনাম হোয়াইট হাউস

এই ভিসা সংকটের কেন্দ্রে আছে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করছেন, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী কার্যকলাপ রোধে কাজ করছে না, এবং তাই তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

হাভার্ড এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালত আপাতত সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছে এবং ২৯ মে শুনানি নির্ধারিত হয়েছে।

চীনের সাংহাই থেকে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় ভর্তি হওয়া ২২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমি মনে করি আমি ভাগ্যবান, কারণ আমার ভিসা অ্যাপ্রুভ হয়েছে। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। যদি ডিগ্রি শেষ না করেই আমাকে ফেরত পাঠানো হয়? সেটা খুব ভয়ের।”

গুয়াংজু শহরের এক শিক্ষার্থী যিনি নিজেই একটি স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি পরিচালনা করেন, বলেন, “নিয়ম এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে কাউকে কোনো পরামর্শ দেওয়া কঠিন।”

ভারতের ২৪ বছর বয়সী আইনুল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করতে যাচ্ছেন নিউ জার্সির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে তিনি I-20 ডকুমেন্ট পেয়েছেন, কিন্তু অ্যাম্বাসিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, “আমাকে হয়তো দেরিতে যাত্রা করতে হবে, অথচ আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। সময়মতো যেতে না পারলে সেটা হারানোর আশঙ্কা আছে।”

যুক্তরাজ্যের নরউইচ শহরের অলিভার ক্রপলি বলেন, “আমার আমেরিকায় এক বছর পড়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো ভিসা পাইনি। ৩০০ পাউন্ড খরচ করেও ফলাফল শূন্য।” তিনি স্কলারশিপ হারাতে পারেন এবং তা তার পড়াশোনার সময়সূচিও প্রভাবিত করতে পারে।

ওয়েলসের শিক্ষার্থী আলফ্রেড উইলিয়ামসন বলেন, “আমরা যেন দাবার ঘুঁটি। হোয়াইট হাউস ও হাভার্ডের দ্বন্দ্বে আমরা শুধু বলির পাঁঠা।”

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২১০টির বেশি দেশ থেকে ১১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি হয়েছেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি ফি আদায় হয়, যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়নির্ভরতা গড়ে তোলে। এই সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে।

মুমু

×