
ছবি: সংগৃহীত।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি বলেছেন, “সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করেছে।” সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে এসে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রবিউল আলম বলেন, “আমি তো দায়বদ্ধ জনগণের কাছে। আপনি যদি বলেন এই সরকার অন্তর্বর্তী, তাহলে বলব—এই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তারা বলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, কিন্তু জনসমর্থিত সরকার আর জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার এক নয়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “জনসমর্থন ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। কেউ সকালবেলা সমর্থন দিল, বিকেলে দিল না—এটা হতে পারে। কিন্তু একটি নির্বাচিত সরকারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকে।”
তিনি বলেন, “তারেক রহমান সঠিকই বলেছেন—জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে। সরকার অল্প ও বেশি সংস্কারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে, সরকারের আসলে কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে।”
রবি বলেন, “আমরা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না, কিন্তু যখন সরকার ভোটাধিকার হরণ করে, জনগণের চাওয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাকে অগ্রাহ্য করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগণের অসন্তোষ বাড়ে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি ডিসেম্বরেও নির্বাচন না হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো অসহযোগিতা করতে বাধ্য হবে। কারণ আমরা এমন একজনকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না, যিনি অনির্বাচিতভাবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেন।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ একসময় একটি রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু এখন তারা ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছে—যখন তারা নিজের মতো করে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়।”
সরকারের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “নির্বাচন-সংক্রান্ত যেসব সংস্কার দরকার ছিল, সেখানে সরকার মনোযোগ দিচ্ছে না। বরং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নগদ পেমেন্টে সীমা, ক্যাশব্যাক, এসি, টিভি—এসব প্রচারণা চলছে, অথচ নির্বাচন নিয়ে কার্যকর সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি নির্বাচিত সরকার গঠন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ সংস্কার বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু সরকার অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন না করে সময়ক্ষেপণ করছে।”
রবি আরও বলেন, “সব রাজনৈতিক দল একমত হলে নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিতে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংস্কার আনা সম্ভব। সেগুলো ইশতেহারে তুলে ধরা যেতে পারে। জনগণ যদি নির্বাচিত করে, সেই দল পার্লামেন্টে গিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।”
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ববান রাজনৈতিক দল হিসেবে আলোচনা করেছি, জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে নির্বাচন অবাধ করতে যা যা দরকার তা করব। কিন্তু সরকারের নির্লিপ্ততা এবং নির্বাচনে বিলম্ব রাজনৈতিক অনাস্থা বাড়াচ্ছে।”
টকশোর শেষ দিকে শেখ রবিউল আলম রবি পুনরায় বলেন, “আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়। সমর্থিত সরকার আর নির্বাচিত সরকার এক নয়—এই বিভ্রান্তি দূর করতে হবে।”
নুসরাত