
ছবি : জনকণ্ঠ
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী হরিপুর জমিদার বাড়ি, যা দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে ছিল, এখন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রাথমিক সংস্কার কাজ, যা স্থানীয়দের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
ইতিহাসের পাতায় হরিপুর জমিদার বাড়ি
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কাপড় ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম কুন্ডু হরিপুরে আসেন এবং মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলার জমিদারির কিছু অংশ কিনে নেন। তার পুত্র রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী ১৮৮৬ সালে জমিদার বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন, যা ১৮৯৩ সালে তার পুত্র যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই প্রাসাদসম বাড়িতে ছিল কাচারিঘর, অন্দরমহল, নাচমহল, ঠাকুরঘর ও উপাসনালয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জমিদার পরিবার ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
সংস্কারের নতুন অধ্যায়
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর, ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িটির প্রাথমিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেয়ালের পুরনো পলেস্তারা অপসারণ করে নতুন করে পলেস্তারা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এখনো রঙ বা চূড়ান্ত সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়নি, তবে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান হোসেন বলেন, “ছোটবেলা থেকে দেখছি এই দালানটা ভাঙা-জীর্ণ। এখন যদি ঠিকঠাক করা হয়, তাহলে এলাকার জন্য খুব ভালো হবে।”
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে আগত দর্শনার্থী সারোয়ার হোসেন সোহান বলেন, “তিন বছর আগে যখন এসেছিলাম, বাড়িটা ছিল যেন একেবারে পরিত্যক্ত—ভূতুড়ে পরিবেশ। এখন সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় সত্যিই ভালো লাগছে।”
অতীতের অবহেলা থেকে বর্তমানের গৌরব
জমিদার বাড়ির দীর্ঘদিনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক বছর ধরে এই জমিদার বাড়িটি অবহেলিত ছিল। একসময় এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসতো। এখন যেহেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, এতে করে শুধু ভবনটাই রক্ষা পাবে না—এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গৌরবের প্রতীক হিসেবেও সংরক্ষিত থাকবে। হরিপুরের মানুষের জন্য এটি হয়ে উঠবে অতীত জানার এক জীবন্ত নিদর্শন।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
হরিপুর জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক সালমান ফারসি বলেন, “সংস্কারের কাজ শেষ হলে এ বাড়িটি নতুন রূপে সবার নজর কাড়বে। আমাদের লক্ষ্য এটিকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা, যাতে ইতিহাস আর ঐতিহ্য একসাথে উপভোগ করতে পারে আগত দর্শনার্থীরা।”
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল মাজলুবিন রহমান জানান, “বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকায় না থাকলেও জেলা প্রশাসনের বাজেট থেকে প্রাথমিক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।”
সানজানা