
ছবি:সংগৃহীত
সুরা ওয়াকিয়া, (সূরা নং: ৫৬) একটি মক্কায় অবতীর্ণ সুরা, যার আয়াত সংখ্যা ৯৬ এবং রুকু সংখ্যা ৩। ‘ওয়াকিয়া’ শব্দের অর্থ ‘নিশ্চিতভাবে সংঘটিত ঘটনা’, যা এখানে কেয়ামত বা পরকালীন বিচার দিবসকে নির্দেশ করে। এ সুরায় কেয়ামতের দিন মানুষের বিভাজন, পুরস্কার ও শাস্তির বর্ণনা এবং জান্নাত-জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সুরা ওয়াকিয়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, এই সুরা নিয়মিত পাঠ করলে দারিদ্রতা ও উপবাস জীবনে স্থান পাবে না।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে, দারিদ্র তাকে কখনো স্পর্শ করবে না।’
(বায়হাকি, হাদিস: ২৪৯৮)”
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উসমান গনি (রাঃ) হজরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) অসুস্থ অবস্থায় তার কন্যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন:
“আমি আমার কন্যাদেরকে জোর দিয়ে বলে দিয়েছি, যেন তারা প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—
‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনো উপবাস করবে না।’
(তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৬৫)”
এই ফজিলত লাভের সময় হিসেবে সাধারণত মাগরিবের পর নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে কেউ রাতের অন্য সময়েও পাঠ করলে আশা করা যায় তিনি এ ফজিলত অর্জন করবেন।
সুরা ওয়াকিয়ায় কেয়ামতের ভয়াবহতা এবং বিচার দিনের বিভাজন স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেদিন মানুষ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত হবে:
১. সাবিকুন (অগ্রগামী, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তরা)
২. আসহাবুল ইয়ামিন (ডান হাতের সঙ্গীরা)
৩. আসহাবুশ শিমাল (বাম হাতের সঙ্গীরা)
সুরায় বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন পৃথিবী কেঁপে উঠবে, পাহাড় গুঁড়িয়ে যাবে এবং মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী স্থানে অবস্থান নেবে।
সুরা ওয়াকিয়ায় জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত, বেহেশতের ফলমূল, ঝর্ণাধারা, মধুর সঙ্গ, আরামদায়ক আসন ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। অপরদিকে, জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি, জ্বলন্ত আগুন, তপ্ত পানি, কাঁটাযুক্ত খাদ্য এবং অপমানের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সুরা ওয়াকিয়া শুধু কেয়ামতের ভয়াবহতা নয়, বরং জান্নাত লাভের জন্য অনুপ্রেরণা এবং পরকালের প্রস্তুতির এক উজ্জ্বল পথনির্দেশনা। প্রতিদিন রাতে এ সুরার তেলাওয়াত ব্যক্তি জীবনে বরকত ও আর্থিক নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
আঁখি