
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ব্যবসায়িক যুদ্ধের একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি তীব্র পদক্ষেপের ফলে। বুধবার রাতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি ও শিক্ষার্থীদের ওপর একসঙ্গে দুই ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলো।
চীনের চোখে, পরিস্থিতি ইতোমধ্যে কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। বিশ্ব দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে গুরুতর শুল্ক কেটে দেয়ার এক যৌথ সিদ্ধান্তের ফলে চিনের কারখানা ফের চালু হচ্ছিল, বন্দর থেকে পণ্য রপ্তানি শুরু হচ্ছিল এবং মিডিয়া এই ঐকমত্যকে জাতীয় বিজয় হিসেবে উদযাপন করছিল। শীর্ষ কর্মকর্তা গুলোও সহযোগিতার আশাবাদ ব্যক্ত করছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই আমেরিকার পক্ষ থেকে দুটি বড় ধাক্কা দেওয়া হলো। প্রথমটি ছিল, যুক্তরাজ্যের ফাইন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন কিছু আমেরিকান কোম্পানিকে চীনের জন্য সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার বিক্রি থেকে কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে।
সিমেন্স নামের জার্মান প্রযুক্তি কোম্পানি জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে এই নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে, যা শুধু চীনেই নয়, চীনের সামরিক সংস্থাগুলোর জন্যও প্রযোজ্য।
এই ক্ষুদ্র চিপগুলো যা স্মার্টফোন, কম্পিউটার, গাড়ি ও গৃহস্থালির যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়, গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকা-চীন প্রযুক্তি যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে চীনের Huawei কোম্পানিকে AI চিপ ব্যবহারে বাধা দিয়েছে।
চীনের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এই পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তার নামে আমেরিকার অত্যধিক হস্তক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞা হিসাবে সমালোচনা করেছেন।
এরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র “চীনা ছাত্রদের ভিসা তীব্রভাবে বাতিল করবে” বিশেষত যারা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পড়াশোনা করছে বা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত।
এটি চীনা পরিবারগুলোর জন্য বড় ধাক্কা। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭০,০০০ এরও বেশি চীনা শিক্ষার্থী ছিল। এই শিক্ষার্থীরা সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে, যারা দীর্ঘদিন অর্থ সঞ্চয় করে সন্তানদের বিদেশে পড়াতে চায়। রুবিওর ঘোষণার ফলে শিক্ষার্থীরা অপ্রত্যাশিতভাবে ভিসা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন এবং অনেকেই পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বিগ্ন।
চীনের বিদেশ মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ করেছে এবং বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র “অযৌক্তিক ভাবে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার কথা বলে ভিসা বাতিল করছে”।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী ‘ক্যান্ডি’ (ছদ্মনাম) বলেছেন, তিনি ভিসা বাতিলের ভয়ে আতঙ্কিত, কারণ তিনি তার উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে চাই।
অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি চীনের জন্য সাময়িক হলেও লাভজনক হতে পারে কারণ অনেক মেধাবী চীনা ছাত্র এবং গবেষকরা আমেরিকা ত্যাগ করে দেশে ফিরে যেতে পারে অথবা চিনের শিক্ষা ব্যবস্থা বেছে নিতে পারে।
এরা হতে পারে প্রযুক্তি ও গবেষণার নতুন নেতৃত্ব যারা চীনের অগ্রগতিতে সহায়ক হবে, যা ট্রাম্প প্রশাসন ঠেকাতে চাচ্ছে।
একই দিনে, একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের বেশিরভাগ বৈশ্বিক শুল্ক আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে চীনের ওপর ৩০% শুল্কও রয়েছে। তবে প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করেছে, ফলে এই শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেলো।
সূত্রঃ সিএনএন
নোভা