
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত ইস্যু ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র পড়েছে এক গভীর উভয় সংকটে। কয়েক দশক ধরেই ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা চলছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুনভাবে ইরানের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু এই আলোচনার মাঝেই ইরানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। আর এই খবর সামনে আসার পর তীব্র উদ্বেগে কাঁপছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন প্রধান আরব রাষ্ট্র—সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এই জটিল পরিস্থিতিতেই এক দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে ইসরাইল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান। সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিন দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরিই ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো হামলা না চালায়।
তারা যুক্তি দেন, ইরানকে লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী কোনো সামরিক অভিযানে নামলে বিপরীতে ইরান পাল্টা হামলা চালাতে পারে সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাতে—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বহু সেনা ঘাঁটি রয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ এসব মিত্র দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ইতোমধ্যে তেহরান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুশিয়ারি দিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামিনীর সরকার। তাদের ভাষ্য, “মধ্যপ্রাচ্যে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা কাচের ঘরে বসে আছে। কাচের ঘরে বসে কারো দিকে পাথর ছোঁড়া উচিত নয়।”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে—তাদের সরকারকে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনী যদি তাদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালায়, তবে তা শত্রুতামূলক আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এর ফলাফল হবে সেইসব দেশের জন্য মারাত্মক।
এই পরিস্থিতিতে ইরান তাদের সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রেখেছে। আয়াতুল্লাহ খামিনীর নির্দেশে বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে যেকোনো চরম পরিস্থিতির জন্য।
অন্যদিকে, ইরানে হামলার বিষয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে ইসরাইল। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে একাধিকবার কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। তিনি বলেছেন, “ইরানের সঙ্গে আমাদের পারমাণবিক আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। এই মুহূর্তে সামরিক হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
তবে ট্রাম্পের এই শান্ত বার্তার বিপরীতে ইরান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তেহরানের উপর হামলা হলে তারা কাউকেই ছাড় দেবে না।
ফরিদ