
অভিভাবকরা সাধারণত সন্তানদের মঙ্গলই চান। কিন্তু ব্যস্ত জীবনের চাপে অনিচ্ছাকৃত কিছু আচরণে সন্তানের আবেগে গভীর আঘাত লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আচরণগুলো বদলানো সম্ভব তবে আগে বুঝতে হবে কোন কাজগুলো সন্তানের মন ভেঙে দেয়।
একজন শিশু কেবল নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করে। এই সময়ে যদি তার প্রিয় মানুষ অর্থাৎ বাবা-মায়ের কাছ থেকেই অবহেলা, উপেক্ষা কিংবা রুক্ষতা পায়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন জেনে নিই, কোন অভ্যাসগুলো বাবা-মায়েরা নিজেরাও বুঝে ওঠেন না, অথচ সেগুলোই সন্তানের মন ভেঙে দেয়।
সন্তানের গল্প শুনতে উপেক্ষা করা
দীর্ঘ কর্মদিবসের শেষে অনেক বাবা-মায়েরই ধৈর্য থাকে না সন্তানের কথাবার্তা শুনতে। শিশুরা হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলছে না, এমনকি অনেক সময় তাদের গল্প একটু এলোমেলো বা হাস্যকরও হতে পারে। তবু তারা চায় বাবা-মা মনোযোগ দিয়ে শুনুক।
এই গল্পগুলো উপেক্ষা করা মানে, শিশুকে শেখানো তোমার কথা, তোমার অনুভূতির গুরুত্ব নেই। একটু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এতে তারা বড় হয়ে জীবনের গুরুতর সমস্যাগুলোর সময়ও আপনাকে নির্ভরতার জায়গা হিসেবে মনে রাখবে।
ভুল করলে ভালোবাসা আটকে রাখা
শিশুরা ভুল করবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলের পর বাবা-মার প্রতিক্রিয়াই ভবিষ্যতের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। চুপচাপ হয়ে যাওয়া, জড়িয়ে না ধরা বা আবেগ থেকে দূরে সরে যাওয়া শিশুকে এই বার্তা দেয়—ভালোবাসা অর্জন করে নিতে হয়।
বড় হয়ে এমন শিশুরা বুঝতে পারে না সুস্থ সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত। তাদের জন্য ভালোবাসার মানে হয়ে ওঠে শর্তসাপেক্ষ, যা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
ওই মুহূর্তেই চিৎকার করে ফেলা
অনেক সময় শিশুরা নিজেদের আবেগ বুঝে উঠতে পারে না। ঠিক তখনই যদি বাবা-মা জোরে ধমক দেন বা রেগে যান, শিশুর মনে ভয় ঢুকে পড়ে। তারা শেখে নিজের আবেগ প্রকাশ করা মানে বিপদ ডেকে আনা।
চিৎকারের বদলে যদি আপনি শান্ত ও সহানুভূতিশীল থাকেন, তাহলে সন্তান ধীরে ধীরে শিখে ফেলে কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং বিপদের সময় কোথায় আশ্রয় খুঁজতে হবে।
খেলাধুলার সময় ফোনে মনোযোগ দেওয়া
শুধু পাশে বসে থাকা মানেই সন্তানকে সময় দেওয়া নয়। যদি তারা খেলছে আর আপনি মোবাইলে স্ক্রল করছেন, তবে শিশুর মনে হবে আপনার কাছে সে গুরুত্বহীন, একটি স্ক্রিনের চেয়ে মূল্যহীন।
সন্তানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়াটাই ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্কে মূল চাবিকাঠি। তারা লক্ষ করে আপনি কতোটা মনোযোগী। অর্ধেক মনোযোগ দিয়ে তৈরি হয় অর্ধেক সম্পর্ক।
তাদের অনুভূতি খারিজ করে দেওয়া
শিশু কষ্ট পেলে অনেক বাবা-মা বলেন, ‘তেমন কিছু হয়নি’ বা ‘এটাতে কাঁদার কী আছে’। কিন্তু এতে শিশুর আবেগকে অস্বীকার করা হয়।
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অ্যানি তানাসুগার্ন জানান, “যেসব শিশু ছোটবেলায় বারবার তাদের বাস্তবতা বা আবেগকে অস্বীকার হতে দেখে, বড় হয়ে তারা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশে অক্ষম হয়ে পড়ে। তারা আবেগগতভাবে অনুপস্থিত থাকে, গভীর সম্পর্ক তৈরি করতেও কষ্ট হয়।”
বারবার তাড়াহুড়ো করা
‘তাড়াতাড়ি করো’, ‘হল না এখনো?’ এ ধরনের কথা শিশুদের মনে একধরনের চাপ তৈরি করে। তারা ভাবতে শেখে তাদের উপস্থিতি বিরক্তিকর বা অপ্রয়োজনীয়।
শিশুরা ধীরে চলে, কারণ এটাই শৈশবের সৌন্দর্য। তারা দেখে, বুঝে, থেমে থেমে হাঁটে। বাবা-মা যদি এতে বিরক্ত না হয়ে ধৈর্য দেখান, তবে সন্তানের মন আরও উদার ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
সন্তান মানুষ করা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু প্রতিদিনের কিছু ছোট অভ্যাস, যেগুলো আমরা হয়তো বুঝেই উঠি না, সেটাই সন্তানের মনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করতে পারে।
বাবা-মা হিসেবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো সন্তানের পাশে থাকা, তাদের অনুভূতিকে সম্মান করা এবং বুঝে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া। ভুল হতেই পারে, তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে সম্পর্ক আবারও সুস্থ ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/mrybuap9
আফরোজা