ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিশুদের খাবারে লুকিয়ে থাকা ‘অদৃশ্য হুমকি’!

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:১৮, ১ জুন ২০২৫

শিশুদের খাবারে লুকিয়ে থাকা ‘অদৃশ্য হুমকি’!

ছবি: সংগৃহীত।

অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত কিছু কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক উপাদান বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এসব উপাদান শিশুদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডাঃ জ্যাক টার্নার।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় এখনও এমন কৃত্রিম খাদ্য রং অনুমোদিত রয়েছে, যেগুলো ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশগুলো ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে।

একজন মা তার পাঁচ বছরের সন্তানের চঞ্চলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন, সম্প্রতি তার সন্তানকে সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছে এবং এক বান্ধবীর পরামর্শে তিনি সন্দেহ করছেন, খাদ্যপণ্যেই এর মূল কারণ লুকিয়ে আছে। এই প্রসঙ্গে ডা. টার্নার বলেন, “হ্যাঁ, এটি পুরোপুরি সম্ভব। কিছু কৃত্রিম খাদ্য রং শিশুদের আচরণে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে এবং তা কখনো কখনো স্বাস্থ্যঝুঁকির পর্যায়েও যেতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা জানান, অস্ট্রেলিয়ার বাজারে এখনো যে রংগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো Red Dye No. 3, যা প্রাণীদের ওপর পরীক্ষায় থাইরয়েড টিউমারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই রংটি ২০২৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে, তবে অস্ট্রেলিয়ার দোকানের শেলফে এখনো এটি ব্যবহৃত হচ্ছে গ্লেসে চেরি, ললিপপ ও অন্যান্য চকলেটজাত পণ্যে।

এছাড়া Tartrazine (E102) এবং Sunset Yellow (E110)-এর মতো রং শিশুদের অতিরিক্ত চঞ্চলতা, ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, এবং আচরণগত সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়। তা সত্ত্বেও, এই রংগুলো এখনো অস্ট্রেলিয়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত।

শিশুর মস্তিষ্কে সরাসরি প্রভাব
ডাঃ টার্নারের ভাষায়, “এই রংগুলো শুধু খাবারকে আকর্ষণীয় করে তোলে না, বরং তা শিশুর নিউরোট্রান্সমিটারে প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি blood-brain barrier পর্যন্ত অতিক্রম করে মেজাজ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।”

তিনি বলেন, “শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ছোট শরীরের অধিকারী, তাদের মস্তিষ্ক এখনো গঠনের প্রক্রিয়ায়, এবং তাদের খাদ্যতালিকায় প্রায়ই রঙিন ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থাকে — যা একটি বিপজ্জনক সংমিশ্রণ তৈরি করে।”

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, খাবারের লেবেল খুঁটিয়ে পড়া গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে E-number (যেমন E102, E110, E129) দেখে কৃত্রিম রং শনাক্ত করা যায়। প্রাকৃতিক রংযুক্ত খাবার যেমন বিটরুট, হলুদ, কিংবা স্পিরুলিনা ব্যবহৃত পণ্য বেছে নেওয়া উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে ঘরে তৈরি বা কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের উচিত খাদ্য কোম্পানি ও সরকারিভাবে আরও স্বচ্ছ লেবেলিং ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলা।

ডা. টার্নার বলেন, “এই রংগুলো পুষ্টির জন্য নয় — বরং শুধুই বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিজ্ঞান বাস্তবতা তুলে ধরছে, আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”

তিনি জানান, “যদি ইউরোপ বা আমেরিকায় কোনো রং বা উপাদান নিষিদ্ধ হয়, তবে তা অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের জন্য কীভাবে নিরাপদ হতে পারে?”

এটি শুধু একজন মায়ের সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি নয় — এটি গোটা সমাজের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সরকার ও শিল্পখাতের দায়িত্বশীলতা মিলেই শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ খাদ্যপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। খাদ্য যখন শুধু খাবার থাকে না, তখন সচেতনতা হয়ে ওঠে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।

সূত্র: https://short-link.me/-nHl

মিরাজ খান

×