
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বোয়িং ৭৪৭-৮ ভিআইপি জেট উপহার দেওয়ার পর, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম থেকে পালিয়ে চলে যান শান্ত সাগরের কোলে—তাঁর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সুপারইয়াট আল লুসাইল-এ চড়ে। বিশাল এই জলযান একটি এনএফএল ফুটবল মাঠের চেয়েও দীর্ঘ, ছয়টি ডেক, একাধিক সুইমিং পুল, বিউটি স্যালনসহ নানা রাজকীয় সুবিধায় পূর্ণ।
বোয়িং জেটের উপহার দেওয়ার খবর যখন ওয়াশিংটনে শিরোনাম হচ্ছিল, তখন আমিরের ইয়াট নীরবে ভিড়ল স্পেনের মায়াময় দ্বীপ মায়োর্কার পোর্ট আন্দ্রাট্স-এ। একদিকে বিশ্ব রাজনীতির ছায়াপথে কাতারের কূটনৈতিক সৌজন্য, অন্যদিকে বিলাসের অদ্বিতীয় প্রকাশ—এই দুটি পদক্ষেপে একসাথে মিশে গেল কাতারীয় শৈলী: প্রচারবিমুখ, পরিকল্পিত, অথচ শক্তিশালী।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ব্যক্তিগত ইয়াট আল লুসাইল তৈরি করেছে জার্মানির বিখ্যাত শিপইয়ার্ড লুরসেন। ইয়াটটির বাহ্যিক নকশা করেছে লন্ডনের H2 Yacht Design, আর অভ্যন্তর নকশার কৃতিত্ব March & White-এর। নকশায় রাজকীয়তা ও আধুনিক শিল্পের মেলবন্ধন দেখা যায়। ইয়াটটিতে রয়েছে প্যানোরামিক কাচের দেয়াল, মার্বেল ফ্লোর, হেলিপ্যাড, ইনডোর সিনেমা, পূর্ণাঙ্গ স্পা এবং এমনকি একটি লিমুজিন গ্যারাজও।
এমন সময়ে আমিরের এই বিলাসযাত্রা আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন কিছুদিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দেন একটি হেডস-অফ-স্টেট মানের বিমান, যা বিলাসিতা ও প্রযুক্তিতে অনেকাংশে Air Force One-এর সমতুল্য। এটিকে শুধু পুরস্কার নয়, এক ধরনের বার্তাও বলা যায়—বিশ্ব কূটনীতিতে কাতার নিজের প্রভাব বলিষ্ঠভাবে রেখে যেতে জানে, বক্তৃতা নয় বরং বিমানে চড়ে ও ইয়াটে ভেসে।
আল লুসাইল বনাম স্টিভ জবসের ‘ভিনাস’
মায়োর্কার বন্দরে নোঙর করা আল লুসাইল তার বিশালতা ও বিলাসে ছাপিয়ে যায় স্টিভ জবসের ১২০ মিলিয়ন ডলারের ইয়াট ভিনাস-কেও।
আল লুসাইল – এক ভাসমান রাজপ্রাসাদ
২০১৭ সালে নির্মিত এই ইয়াটটির দৈর্ঘ্য ১২৩ মিটার, যার অভ্যন্তরে থাকতে পারে ৩৬ জন অতিথি এবং ৫৬ জন ক্রু। স্টিলের হাল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নির্মিত সুপারস্ট্রাকচারের এই জাহাজ ঘন্টায় ১২ নট গতিতে চলতে পারে এবং ৪,৫০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে সক্ষম। রাজকীয় স্বাচ্ছন্দ্য ও জার্মান প্রকৌশল মিলে এটি হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিপত্তির এক জলভিত্তিক প্রতীক।
এই গল্প কেবল বিলাসিতা নয়, বরং এক কৌশলী বার্তা—বিশ্বে কিভাবে উপহার, ইঙ্গিত ও ভিজ্যুয়াল শক্তির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা যায়, কাতার তা দেখিয়ে দিচ্ছে। ইয়াটের ডেকের নিচে এবং বিমানের ককপিটে, কূটনীতি এখন অন্যরকম।
সূত্রঃ luxurylaunches
নোভা