ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আশিক চৌধুরির চমকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের ভান্ডার নিয়ে আসছে তুরস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৩০ মে ২০২৫

আশিক চৌধুরির চমকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের ভান্ডার নিয়ে আসছে তুরস্ক

ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সাম্প্রতিক তুরস্ক সফর ও সেখানকার অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে তাকে তুরস্কের তৈরি একটি অত্যাধুনিক রাইফেল হাতে দেখা যায়। কয়েকদিন আগেই তিনি বাংলাদেশে তৈরি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ অস্ত্রের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এবার তার সেই স্বপ্ন বাস্তবের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

 

বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি তুরস্ক সফর করেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে যৌথ সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করা এবং বাংলাদেশে গোলাবারুদ ও সামরিক যান তৈরির একটি নতুন কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা।

এই সফরের অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান *মেকানিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (MKE)* পরিদর্শন করেন। বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির তৈরি অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক যানবাহন এবং বিভিন্ন আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ঘুরে দেখেন।

 

সফরে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন গোলাবারুদ ও সমরযান তৈরির কারখানা স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং যৌথ শিল্প সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। বিডা চেয়ারম্যান জানান, “আমরা তুর্কি বিশেষজ্ঞদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ গ্রহণ করে বাংলাদেশে নিজস্ব সামরিক কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা তাদেরকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনার একটি পূর্ণাঙ্গ ‘৩৬০ ডিগ্রি ভিউ’ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

 

 

প্রায় সাত দশক আগে আঙ্কারায় প্রতিষ্ঠিত MKE বর্তমানে তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাসল্ট রাইফেল, গোলাবারুদ, আর্টিলারি সিস্টেম, এরিয়াল বোমা, ল্যান্ডমাইন, বিস্ফোরক, হাউইথজার, আর্টিলারি রকেট এবং মিজাইল নির্মাণে বিশেষজ্ঞ। বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে তাদের অস্ত্র রপ্তানি করা হয়।

MKE-এর তৈরি ১০৫ মিলিমিটারের হাউইথজার আর্টিলারি সিস্টেম ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর বহরে যুক্ত রয়েছে।

 

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে, যার ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, হালকা অস্ত্র, গুলি, গোলা ইত্যাদি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেশেই উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এবং তার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে কিছু সামরিক সরঞ্জাম তৈরি হলেও সেটিকে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ প্রয়োজন। বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, “আমাদের একটি লং টার্ম প্ল্যান আছে। ভবিষ্যতে একটি *বিশেষায়িত মিলিটারি ইকোনমিক জোন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ নয়, বরং আঞ্চলিকভাবে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির পথও খুলে দিতে পারে।”

 

 

তুরস্ক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্পে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেমন আরও মজবুত হবে, তেমনি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনের পথও সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আঁখি

×