ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি: প্রাচীনত্বের এক বিস্ময়কর শিল্পকর্ম

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৯ মে ২০২৫

অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি: প্রাচীনত্বের এক বিস্ময়কর শিল্পকর্ম

প্রাচীন বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি ছিল কেবল এক বিশাল ভাস্কর্যই নয়, মানব উদ্ভাবনী শক্তি ও গভীর ভক্তির এক অসাধারণ নিদর্শন। এটি ছিল ভূমধ্যসাগরের নানা প্রান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করা এক কেন্দ্রীয় ধর্মীয় প্রতীক।

বিখ্যাত গ্রিক ভাস্কর ফিডিয়াস প্রায় ১২ বছর ধরে এই অবিস্মরণীয় শিল্পকর্মটি তৈরি করেন, যা ৪৩০ থেকে ৪২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এটি ছিল এক ক্রাইসেলিফ্যান্টাইন ভাস্কর্য—অর্থাৎ, হাতির দাঁত ও সোনার এক ব্যয়বহুল মিশ্রণ, যা একটি মজবুত কাঠের কাঠামোর উপর স্থাপন করা হয়েছিল। প্রায় ১২ মিটার (৩৯ ফুট) উঁচু এই মূর্তিটি এতটাই বিশাল ছিল যে, মনে হতো জিউস সোজা হয়ে দাঁড়ালে মন্দিরের ছাদ ভেঙে যাবে।

জিউসকে একটি সুসজ্জিত সিংহাসনে উপবিষ্ট দেখানো হয়েছিল। তাঁর ডান হাতে ছিল বিজয়ের দেবী নাইকের ছোট মূর্তি, আর বাম হাতে ঈগল শোভিত রাজদণ্ড—যা তাঁর কর্তৃত্বের প্রতীক। সিংহাসনের সামনে জলপাই তেলে ভরা একটি পুল ছিল, যা মূর্তিটিকে আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করত এবং এর বিশালতা বাড়াত।

প্রাচীন গ্রিকদের কাছে এই মূর্তি কেবল শিল্পকর্ম ছিল না, এটিকে ধরা হত পৃথিবীতে দেবতারই এক রূপ। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা জিউসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অলিম্পিয়ায় আসতেন। এমনকি রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা যখন এটি রোমে সরানোর চেষ্টা করেন, তখন এক কিংবদন্তি অনুসারে মূর্তিটি এমনভাবে "উচ্চস্বরে হেসে উঠেছিল" যে, তা স্থানান্তরের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।

জিউসের মূর্তির চূড়ান্ত পরিণতি আজও এক রহস্য। এটি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আগে হারিয়ে যায়। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি কনস্টান্টিনোপলে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি আগুনে ধ্বংস হয়। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন, এটি অলিম্পিয়ার মন্দিরের সাথেই বিলীন হয়ে যায়, হয়তো ৪২৫ খ্রিস্টাব্দের আগুন বা ৫২২/৫৫১ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে।

শারীরিকভাবে অনুপস্থিত হলেও, জিউসের মূর্তি প্রাচীন গ্রিক শিল্প ও ধর্মের এক আইকনিক প্রতীক হিসেবে চিরকাল রয়ে গেছে। এর বিশালতা ও সূক্ষ্ম কারুকার্য বহু শিল্পকর্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। অলিম্পিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে আজও ফিডিয়াসের কর্মশালার বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি মানব সৃজনশীলতা এবং আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষার এক শক্তিশালী প্রতীক, যা আমাদের প্রাচীন গ্রিক সভ্যতাকে বুঝতে আজও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

 

রাজু

×