
ছবি: সংগৃহীত।
আল মকতা ব্রিজ, প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ, আবুধাবির প্রথম বৃহৎ ল্যান্ডমার্ক ব্রিজ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আবুধাবি দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডের সংযোগস্থল এই ব্রিজ আবুধাবির এক সময়ের সাধারণ মৎস্যজীবী গ্রাম থেকে এক আধুনিক মহানগরে রূপান্তরের জীবন্ত সাক্ষী।
১৯৫০ সালের শুরুতে একটি অস্থায়ী কজওয়ে (মাটি ও পাথরের সেতু) নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে গাড়িতে সহজে দ্বীপে প্রবেশ করা যায়। সেই সময় এমিরি গার্ডরা এই কজওয়ের ওপর দিয়ে হেঁটে পুরনো প্রহরী টাওয়ারের দিকে যেতেন, যা মকতা চ্যানেলের মাঝখানে অবস্থিত ছিল।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর ১৯৬৭ সালে নির্মিত হয় প্রথম স্থায়ী মকতা ব্রিজ। ১৯৬৮ সালের একটি ছবিতে দেখা যায় এই এক স্প্যান বিশিষ্ট স্টিলের ব্রিজটি নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। এটি ছিল ওয়াগনার বিরো গাল্ফ এলএলসি’র প্রথম প্রজেক্ট, যা আবুধাবিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত করে।
ব্রিজটির পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক মকতা টাওয়ার, যা ১৮ শতকের শেষভাগে নির্মিত হয়। প্রবাল পাথর ও সৈকতের শিলার তৈরি এই টাওয়ার ছিল উপকূলীয় প্রতিরক্ষা স্থাপত্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। এটি একসময় দূরপাল্লার ভ্রমণকারীদের জন্য গাইডিং ল্যান্ডমার্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
ব্রিজটি একক আর্চ এবং নীল রঙে রঙিন করে উদ্বোধন করেন মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। পরবর্তীকালে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির কারণে ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে দ্বিতীয় একটি আর্চ সংযুক্ত করা হয়। এতে ব্রিজের পরিবহন সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
পর্যায়ক্রমে আধুনিক এলইডি স্ট্রিট লাইট সংযুক্ত করা হয়, যা শুধু আলো নয়, সৌন্দর্য ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রতীক হয়ে ওঠে।
ব্রিজটির স্থাপত্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাপক সংস্কার কাজ শুরু হয়। এতে ব্রিজের লোহার খিলান পুনর্গঠন, স্টিলের অংশ পুনরায় রঙ করা, কংক্রিট ব্যারিয়ার ও ফুটপাত মেরামত অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২৫ সালের দিকে এসে মকতা ব্রিজ শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং আবুধাবির বিবর্তনের প্রতীক। এটি যেমন অতীতে বাণিজ্য ও যাতায়াতের মূল সেতুবন্ধন ছিল, তেমনি আজও শহরের উত্তরাধিকার ও অগ্রগতির মধ্যে এক নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
আবুধাবির ঐতিহ্য, আধুনিকতা এবং টেকসই ভবিষ্যতের পথচলায় মকতা ব্রিজ এক অনন্য স্মারক হিসেবে টিকে থাকবে বহু প্রজন্ম ধরে।
মিরাজ খান