
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিও অঞ্চল এখন এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্র। এই অঞ্চলটি শুধু কৌশলগতভাবে নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— বিশেষ করে চীনের জন্য। কারণ এখানেই গড়ে উঠেছে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কেন্দ্র, রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর, তেল ও গ্যাস পাইপলাইন এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (BRI) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। কিন্তু এখন এই শহরেই গর্জে উঠেছে যুদ্ধ। বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সামনে দুর্বল হয়ে পড়ছে জান্তা সরকারের প্রতিরক্ষা।
গত ২৬ মে থেকে কিয়াউকফিও অঞ্চলের রামরি সড়কের পাশে পাইনসিকাই গ্রামে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখন রীতিমতো যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতি-র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর একজন শীর্ষ পর্যায়ের জেনারেল স্নাইপার হামলায় নিহত হন। তার মরদেহ বিশেষ বিমানে করে ইয়াঙ্গুনে নিয়ে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই মুহূর্তে কিয়াউকফিও শহর ঘিরে তুমুল লড়াই চলছে। আরাকান আর্মি শহরের কৌশলগত স্থানসমূহ, বিশেষ করে পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ও তার পাশের চীনা মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। চীনের জন্য এই অঞ্চল হারানো মানে শুধু ভৌগোলিক ক্ষতি নয়, বরং কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক বিশাল বিপর্যয়।
এমন পরিস্থিতিতে চীনের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার একটি আইন পাশ করে, যার মাধ্যমে চীনা নিরাপত্তাকর্মীরা অস্ত্র বহন ও ব্যবহার করার অনুমতি পায়। এখন তারা ড্রোনসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটাই ঘনিভূত হয়েছে যে, জান্তা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই কিয়াউকফিও থেকে পিছু হটতে শুরু করেছেন। অথচ এই শহরেই চীনের বহু বছরের কৌশলগত বিনিয়োগ, যেমন গভীর সমুদ্র বন্দর ও পাইপলাইন স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
বর্তমানে আরাকান আর্মি রাখাইনের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টিরই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমনকি দক্ষিণ রাখাইনের পালেতোয়া এলাকাও তারা দখল করেছে। এখন তাদের লক্ষ্য রাজ্যের রাজধানী সিত্তুই।
বিশ্লেষকদের মতে, কিয়াউকফিওর এই যুদ্ধ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির এক উত্তপ্ত সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। একদিকে চীনের কৌশলগত স্বার্থ, অন্যদিকে বিদ্রোহীদের অগ্রগতি— এর মাঝে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=yP7heJxPpyA
এম.কে.