ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চীনের দ্রুত প্রসারমান বাজার দখলে নিচ্ছে উগান্ডার কফি শিল্প!

প্রকাশিত: ১৯:১০, ৩১ মে ২০২৫

চীনের দ্রুত প্রসারমান বাজার দখলে নিচ্ছে উগান্ডার কফি শিল্প!

ছ‌বি: সংগৃহীত

চীনের দ্রুত সম্প্রসারিত কফি বাজার দখলের লক্ষ্যে উগান্ডার কফি শিল্প নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। উগান্ডার বিভিন্ন অঞ্চলে সফররত চীনের একটি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিদল স্থানীয় কফি কৃষকদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পূর্ব ও পশ্চিম উগান্ডার কফি খামার এবং কৃষক সমবায় পরিদর্শনের পর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় ‘উগান্ডা-চীন কফি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন’। এতে অংশগ্রহণ করেন সফররত চীনা প্রতিনিধি দল, উগান্ডায় নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং উগান্ডা সরকারের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে চীনে কফি রপ্তানি বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

উগান্ডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ভিনসেন্ট বাগিরে বলেন, “এই সফর আমাদের দুই দেশের কৃষিভিত্তিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” তিনি জানান, সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উগান্ডার কফি খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরা, মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং উগান্ডার কফিকে বৈশ্বিকভাবে আরও প্রসারিত করা।

তিনি আরও বলেন, “আফ্রিকায় ইথিওপিয়ার পর উগান্ডা দ্বিতীয় বৃহত্তম কফি উৎপাদক। চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশের জন্য আমরা অত্যন্ত অনুকূল অবস্থানে রয়েছি।”

চীনে বর্তমানে প্রিমিয়াম ও স্পেশালটি কফির চাহিদা বাড়ছে। বাগিরে জানান, উগান্ডার উচ্চমানের অ্যারাবিকা ও রোবুস্টা কফি এই চাহিদা পূরণে যথেষ্ট সক্ষম। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চীনে উগান্ডার কফি রপ্তানি ১৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে চীন এখন এশিয়ার মধ্যে উগান্ডার দ্বিতীয় বৃহত্তম কফি বাজারে পরিণত হয়েছে।

চীনে নিযুক্ত উগান্ডার রাষ্ট্রদূত অলিভার ওয়োনেখা বলেন, “এই সফর দুই দেশের মধ্যে কফি খাতে গঠনমূলক সহযোগিতার প্রতীক। উগান্ডার কফি খাত আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি, যা লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষকের জীবিকার উৎস।”

তিনি আরও বলেন, “রোবুস্টা ও অ্যারাবিকা কফির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে আমরা চীনের দ্রুত বর্ধনশীল কফি বাজারে প্রবেশে প্রস্তুত। রপ্তানিতে যেকোনো বাধা দূর করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং চীনা ভোক্তাদের কাছে সহজে পৌঁছাতে একটি কার্যকর রপ্তানি পথ তৈরি করতে চাই।”

তিনি প্রযুক্তি স্থানান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলি, যেখানে উগান্ডার কফি অভিজ্ঞতা এবং চীনের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ একত্রিত হবে। এতে করে কৃষি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতিও আরও উন্নত হবে।”

গুয়াংঝো ইয়িকে ফুড কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক ফেং ঝিকিয়াং বলেন, “উগান্ডার কফি শিল্পের পেশাদারিত্ব আমাদের মুগ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রদর্শনী খামারগুলো রোবুস্টা এবং অ্যারাবিকা দুই ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”

চীনে নিযুক্ত উগান্ডার রাষ্ট্রদূত ঝাং লিজহং জানান, গত এক দশকে চীনে কফির ব্যবহার ১৬৭ শতাংশ বেড়েছে, যার বার্ষিক ব্যবহার এখন ৩৫০,০০০ টনে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে চীনের কফি আমদানি বছরে ২০ শতাংশ হারে বেড়ে হয়েছে ১,৫০,০০০ টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৪০ মিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, “চীন ও আফ্রিকা আধুনিকায়নের পথে ঘনিষ্ঠ অংশীদার। চীন আফ্রিকান দেশগুলোর আত্মনির্ভরতা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সর্বদা সমর্থন করে।”

উগান্ডার কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৭ লক্ষ পরিবার কফি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উগান্ডা কফি রপ্তানি করে ১.১৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের ৮৪৬ মিলিয়নের তুলনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড।

চীনের বাজারে উগান্ডার কফির এই অগ্রযাত্রা শুধু দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করছে না, বরং আফ্রিকার কফি শিল্পকেও একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরছে।

সূত্র: চায়না ডেইলি

মেহেদী

×