
ছবি:সংগৃহীত
২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সংঘটিত এক ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে। অভিযোগ রয়েছে, এসব সময়ে অনেককে প্রকাশ্যে তুলে থানায় আটকে রাখা হতো। আবার কখনো তুলে দেওয়া হতো সাদা পোশাকধারীদের হাতে। পরে মধ্যরাতে চোখ, হাত ও পা বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করা হতো। এরপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে সাজানো হতো ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এর নাটক।
এই পরিকল্পিত নির্যাতনের শিকার অনেকেই আজ পঙ্গু জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রউফ জানান, ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় এক কলেজ মাঠে নিয়ে গিয়ে হাঁটুর নিচে গুলি করা হয়। রউফের দাবি, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই তার ওপর এই নির্মমতা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আমার অপরাধ কী? তিনি বললেন, তোরা তো বিএনপির বড় মস্তান। এটুকু বলেই গুলি করল।”
সেদিনই একইভাবে গুলিবিদ্ধ হন তার ভাগ্নে ও ছাত্রদল নেতা রিয়াজুল ইসলাম। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার একটি পা অকেজো হয়ে যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ওই সময় ভিন্নমত দমন করতে সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ বাহিনী এক ভয়ানক দানবে পরিণত হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে শতাধিক মানুষ নির্যাতনের শিকার হন। অন্তত অর্ধশত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হারিয়েছেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ক্ষমতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলির আগে হাঁটুর নিচে অবশ করার জন্য একধরনের স্প্রে ব্যবহার করা হতো, যাতে সহজে পায়ে গুলি করা যায়। পরে চিকিৎসার নামে কালক্ষেপণ করে এমন অবস্থা তৈরি করা হতো যাতে পা কেটে ফেলতে হয়। শুধু তা-ই নয়, গুলিবিদ্ধদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে তাদের জীবন বিষিয়ে তোলা হতো। এসব মামলার অধিকাংশেই সাক্ষী থাকতেন ‘ভূতুড়ে’ বা কাল্পনিক ব্যক্তি।
ভুক্তভোগীদের অনেকে বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন। তৎকালীন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান এবং পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবীরের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “তৎকালীন সময়ে পুলিশের হাতে ভয়ানক বর্বরতা চালানো হয়েছে। সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো বাহিনীর ভেতরে সক্রিয়, কেউ কেউ অবসর নিয়ে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করছেন।”
এই কথিত বন্দুকযুদ্ধগুলো যে পরিকল্পিত মিশনের অংশ ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের পালাতে সহায়তা করেছে।
সূত্র:https://youtu.be/5ln8DHzy31g?si=vSb4eCh73eb4bMhR
আঁখি