
ছবি: সংগৃহীত
একটি ডায়রি যেটির খবর পেয়ে ইউরোপের ইতিহাসবিদরা অবাক হয়ে কেঁদে উঠেছিল। তারা যেন চশমা পড়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন, কারণ দাবি করা হচ্ছিল সেই ডায়রি হিটলারের নিজের হাতের লেখা। এমনকি বলা হচ্ছিল, ডায়রির পাতায় লুকিয়ে রয়েছে এমন গোপন তথ্য যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে, এমনকি হিটলারের চরিত্রকেও অন্য রঙে মাখিয়ে দিতে পারে।
১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে জার্মান ম্যাগাজিন ‘স্টার’ এবং ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘সানডে টাইমস’ দাবি করে তারা একটি ব্যক্তিগত ডায়রি পেয়েছে, যা হিটলারের হাতে লেখা। এই সাত খণ্ডের ডায়রিতে লেখা ছিল, হিটলার গণহত্যার অনেক কিছুই জানতেন না। ডায়রি পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। বড় বড় ইতিহাসবিদরাও এই তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে নতুনভাবে দেখা প্রয়োজন বলে মত দেন।
দাবি করা হয়, ডায়রিগুলো রক্ষা পেয়েছিল একটি বিমান দুর্ঘটনার পর। পরে ঘরের গাদায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল সেগুলো। এক সংগ্রাহকের মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহ করে পত্রিকার অফিসে আনা হয়। প্রচুর টাকা খরচ করে ডায়রিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পিপলারির আঙ্গার ছবিও মিলিয়ে দেখানো হয় যে এগুলো আসল। সেই সময় সবাই বিশ্বাস করেছিল, ইতিহাসের এক বিরল নিদর্শন সামনে এসেছে।
কিন্তু পরবর্তী ফরেনসিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডায়রির কাগজ, কালি, আঠা—সবই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৈরি। ডায়রিতে এমন অনেক তথ্যও ছিল, যা হিটলারের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আসলে এই ডায়রি বানিয়েছিলেন পূর্ব জার্মানির এক প্রতারক, যিনি কন্ট্রাক্ট খুঁজে হিটলারের বই থেকে নকল করে নিজেই হিটলারের হস্তাক্ষর অনুকরণ করে লিখে ফেলেছিলেন।
এই প্রতারণায় যুক্ত ছিলেন একজন গণমাধ্যম কর্মীও। দুজনকেই গ্রেফতার করে জালিয়াতির দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়। পত্রিকাগুলোও পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়। কিন্তু ততদিনে অনেকের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে; কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ সম্মান।
এই প্রতারণার মাঝেও সানডে টাইমস আর স্টার পত্রিকার বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতারণাগুলোর একটি হিসেবে থেকে গেলো হিটলারের সেই ভুয়া ডায়রি।
এসএফ