ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘শহীদ জিয়া: ইতিহাসে অমর এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক’

সোহাগ খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৭, ৩০ মে ২০২৫

‘শহীদ জিয়া: ইতিহাসে অমর এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক’

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কিছু নাম চিরকাল আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলজ্বলে, যাদের ব্যক্তিত্ব সময়কে অতিক্রম করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম—তেমনই এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক, যার জন্ম ১৯৩৬ সালে বগুড়ার গাবতলির বাগবাড়িতে। তিনি শুধু একজন সৈনিক ছিলেন না, ছিলেন জাতির ক্রান্তিকালে ধ্রুবতারার মতো নেমে আসা এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।

ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব

স্বাধীনতার পর জাতি যখন চরম হতাশায় নিমজ্জিত, নেতৃত্ব যখন দিশাহীন—ঠিক সেই সময়েই আবির্ভাব ঘটে জিয়াউর রহমানের। তাঁর নেতৃত্বে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে যায়। বাংলাদেশের জনগণ তখন নতুন করে নিজেদের আত্মপরিচয় খুঁজে পেতে শুরু করে।

তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল শক্তিশালী, ভাবনায় ছিল স্বচ্ছতা আর চিন্তায় ছিল দেশপ্রেম। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং ত্যাগের যে উদাহরণ তিনি রেখেছেন, তা আজও কোটি মানুষকে আলোড়িত করে। একজন সৈনিকের মতো দৃঢ়চেতা মন নিয়ে তিনি আত্মনিয়োগ করেন দেশ গঠনের কাজে।

গ্রামের মাটি থেকে উঠে আসা রাষ্ট্রনায়ক

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের প্রাণস্পর্শী দিকগুলো তিনি বুঝতেন। বলা চলে, বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রাম যেন তাঁর মানসপটে গাঁথা ছিল। মানুষের হৃদয় কীভাবে জয় করতে হয়—তা তিনি জানতেন বলেই গ্রামের মাটিতেই ছিল তাঁর দিনের শুরু। এই মাটির টানেই তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে।

স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে ইতিহাসের বাঁকবদলের সময় জিয়াউর রহমান কণ্ঠে তুলে নেন সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা, ‘উই রিভোল্ট। আই মেজর জিয়া, ডিক্লিয়ার দ্য ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ‘’

শুধু ঘোষণায় থেমে থাকেননি, সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। স্বাধীনতার পর দেশের পুনর্গঠনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। ক্ষমতা নয়, দেশের কল্যাণ ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।

সঙ্কটকালে জাতির ত্রাণকর্তা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পর যখন জাতি দিশাহারা, ঠিক তখনই দৃঢ়তা নিয়ে আবির্ভূত হন জিয়াউর রহমান। উচ্চাভিলাষী সেনা অফিসার নন, বরং জাতির প্রয়োজন মেটাতে উদিত হয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতকে একত্র করে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তাঁর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আজ ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক

জাতীয়তাবাদ, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতি—এই ছিল তাঁর স্বপ্ন। তিনি বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদী শক্তির চোখরাঙানির বাইরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যান। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে দেশকে বের করে এনে বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করেন।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জবাব

এক সময় দেশে এমন এক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি হয়, যেখানে শহীদ জিয়ার নাম উচ্চারণ করাটাও হয়ে দাঁড়ায় ‘অপরাধ’। কিন্তু ইতিহাসের প্রবাহে সত্য কখনও চাপা পড়ে না। কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই নেতা বারবার ফিরে আসেন আলোচনায়, অনুপ্রেরণায়।

শেষকথা

শহীদ জিয়াউর রহমান কোনো আরামপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি ছিলেন এক সংগ্রামী আদর্শবাদী, যিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতিকে জাগাতে হলে আগে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শ যেন একটি জীবন্ত ইতিহাস, যা থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।

আজ যখন আমরা রাষ্ট্রনায়কের সঙ্কটে ভুগি, তখন শহীদ জিয়াউর রহমানের দূরদৃষ্টি ও আত্মত্যাগ আমাদের সামনে পথের দিশা দেখায়। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায়।

সোহাগ খান/রাকিব

×