ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সড়ক ভোগান্তিতে থমকে যাচ্ছে ভাসমান বাজারের পর্যটন সম্ভবনা

জি. এম. আদল,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৩১ মে ২০২৫

সড়ক ভোগান্তিতে থমকে যাচ্ছে ভাসমান বাজারের পর্যটন সম্ভবনা

ছবি: জনকণ্ঠ

ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজারের কারণে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ নানা দেশ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এর মধ্যে ব্যাংককের দামনিওন সাদুয়াক ভাসমান বাজার অন্যতম, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে।

অন্যান্য দেশের মতো ঠিক তেমনই পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীনতম ফ্লোটিং মার্কেট—বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে।

থাইল্যান্ডের রাচাবুরি, অস্ট্রেলিয়ার সলোমন আইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনামের ক্যান থো নদীর ভাসমান বাজারের তুলনায় বৈচিত্র্যে ও সম্ভাবনায় কোনো অংশেই কম নয় বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক বাজার।

বাজারটি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটার বেলুয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত।

এর নামকরণ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা গল্পগাথা। কেউ কেউ বলেন, "বৈঠা দিয়ে মাটি কাটার পর একটি ছোট নদী তৈরি হয়। পরে সেটি ক্রমে বড় নদীতে রূপ নেয়। সেখান থেকেই নদীটির নাম হয় বৈঠাকাটা, আর বাজারের নাম বৈঠাকাটা বাজার।"

প্রায় শতবর্ষী এই ভাসমান বাজারটি পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার এবং নাজিরপুর উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের বেলুয়া নদীর তীরে অবস্থিত। দৃষ্টিনন্দন এই বাজারটি পুরোপুরি পানির ওপর গড়ে উঠেছে।

মূলত প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল ৫টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বসে এই ভাসমান হাট। এই নির্দিষ্ট দিনের বাইরে গেলে হাটের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ থাকে না।

স্থানীয়দের মতে, এই ৫–৬ ঘণ্টার পাইকারি হাটে প্রায় কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে।

অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসেন না। নদী বেষ্টিত অঞ্চল হওয়ায় সবাই জলপথেই নৌকা ও ট্রলার ব্যবহার করে বাজারে আসেন।

কৃষক ও পাইকার ভোরে নৌকা নিয়ে ছুটে আসেন এখানে। সবজির চারা থেকে শুরু করে নানারকম কৃষিপণ্য নিয়ে বসে কৃষক ও পাইকারদের মিলনমেলা।

ভাসমান এই বাজারে চা-পান, ধান, চাল, শাকসবজি, নারিকেল, সুপারি, বরবটি, কুমড়া, পুঁইশাক, করলা, পটল, কাঁচকলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শালগম, কলা, কচু, কচুর লতি, শাকসবজির চারা ইত্যাদি কৃষিপণ্য পাওয়া যায়।

ভোর হওয়ার আগেই নৌকায় পণ্য নিয়ে চলে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কেউ আসেন বিক্রির জন্য, কেউ আসেন কেনার উদ্দেশ্যে। সব বেচাকেনা চলে নৌকা বা ট্রলারে। বৈঠাকাটা নদী এবং আশপাশের কলারদোয়ানিয়া, মুগারঝোর, পদ্মডুবি, মনোহরপুর, বিলডুমুরিয়া, সোনাপুর, গাওখালী, কলাখালী, মধুভাঙা, পাকুরিয়া, দেউলবাড়ী, দোবরা, চাঁদকাঠীসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি এলাকার মানুষ এই বাজারে অংশ নেন।

চাষিরা ছোট নৌকায় পণ্য নিয়ে এসে পাইকারদের বড় ট্রলারে তা বিক্রি করেন। একেকটি নৌকা বা ট্রলার যেন একেকটি আড়ৎ।

দৃষ্টিনন্দন এই বাজার দেখতে সারা বছরই দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসেন।

তবে দীর্ঘদিন ধরে নাজিরপুর থেকে দীর্ঘা হয়ে বৈঠাকাটা পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা। বিভিন্ন স্থানে পিচ-খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে, কোথাও কোথাও সড়ক নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম। ফলে রাস্তাটি প্রায় যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এই যাতায়াত সংকটের কারণে পর্যটকেরা দেশের এই সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি—দ্রুত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার করা হোক। তারা মনে করেন, সড়কটি সংস্কার হলে বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার পর্যটনের জন্য আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মুমু

×