
ছবি: সংগৃহীত
আশ্চর্যজনক একটি ভূ-প্রাকৃতিক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটি ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠছে, তবে এর কারণ টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া নয়—বরং ভয়াবহ খরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলের ভর হ্রাস পাওয়ায় ভূমি ওপরে উঠছে, যা পৃথিবীর গতিশীল প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে।
ভূখণ্ড উঁচু হওয়ার রহস্য
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব বন-এর বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বছরে প্রায় ২ মিলিমিটার হারে ভূমি ওপরে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলে, যেখানে ২০১৫-২০১৯ সালের ভয়াবহ খরার সময় ভূমি ৫-৬ মিলিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়েছে।
খরার কারণে মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলাশয়ে পানি কমে যায়। ফলে পানির ভার কমে গিয়ে মাটির ওপর চাপ হ্রাস পায় এবং ভূপৃষ্ঠ সামান্য ওপরে উঠে আসে—যেমনটা হয় চেপে ধরা ফোম বল ছেড়ে দিলে।
এই ব্যাখ্যাটি প্রমাণ করতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন ভূ-উপগ্রহ GPS এবং GRACE স্যাটেলাইট ডেটা। দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে পানির ভর কমেছে, সেখানেই ভূমি উঁচু হয়েছে।
ভবিষ্যতের প্রয়োগ ও সতর্কবার্তা
এই গবেষণা শুধু ভূমি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেয়নি, বরং ভূগর্ভস্থ পানির মজুত পর্যবেক্ষণের নতুন পথও দেখিয়েছে। GPS ডেটার মাধ্যমে এখন পানির সংকট আসার আগেই সতর্ক হওয়া সম্ভব।
যদি এই প্রযুক্তি কেপ টাউনের ২০১৮ সালের পানির সংকটের সময় ব্যবহার করা হতো, তাহলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
ভবিষ্যতে আরও খরা-প্রবণ অঞ্চল যেমন সাহেল, ক্যালিফোর্নিয়া বা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও এই পদ্ধতি কাজে লাগতে পারে। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর ভূগঠন কেবল মহাজাগতিক ঘটনার জন্যই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াতেও বদলে যেতে পারে।
আবির