ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিয়ের আগে বর-কনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কেন অপরিহার্য?

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২ জুন ২০২৫

বিয়ের আগে বর-কনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কেন অপরিহার্য?

সংগৃহীত

প্রতিটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় এমন রোগ থাকে যা জন্মের আগে থেকেই সন্তানদের প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিনের সমস্যা, বা যৌনবাহিত রোগগুলো সন্তানসহ পরিবারকে অনেক কষ্টে ফেলে দেয়।

এসব রোগ রোধ করতে এবং দাম্পত্য জীবনে সুস্থতার নিশ্চয়তা পেতে বিয়ের আগে বর-কনের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

ধরা যাক, রাহিম ও সুমনা দম্পতির গল্প। তারা বেশ কিছু বছর আগে বিয়ে করেছেন এবং তাদের এক ছেলে আছে। তবে সম্প্রতি জানতে পারেন যে, তাদের ছেলে থ্যালাসেমিয়া নামক জটিল রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত। এই রোগ মূলত বাবা-মায়ের শরীরে থাকা রোগের বাহক জিনের কারণে সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়।

যদি বিয়ের আগে বর-কনের হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করানো হত, তাহলে তারা সহজেই এই ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে ভবিষ্যতে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হতেন। এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে কমই বিরল, তাই এই ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিয়ের পূর্বে করানো অতীব জরুরি। কী ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন?

১. রক্তের গ্রুপ ও আরএইচ টাইপ পরীক্ষা

  • রক্তের গ্রুপ মিললে সন্তান সাধারণত সুস্থ হয়। কিন্তু আরএইচ টাইপ (RH factor) পজিটিভ বা নেগেটিভ কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি মা আরএইচ নেগেটিভ এবং বাবা পজিটিভ হন, তাহলে গর্ভস্থ শিশু ‘ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস’ নামে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা শিশুর প্রাণের জন্য হুমকি স্বরূপ।
  • তবে প্রথম গর্ভধারণের সময় সঠিক চিকিৎসা নিলে সন্তান সুস্থ জন্মানো সম্ভব। এজন্য বিয়ের আগে এই পরীক্ষা জরুরি।

২. হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস (থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা)

  • থ্যালাসেমিয়া হলো এমন একটি জেনেটিক রোগ যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা সঠিকভাবে তৈরি হতে দেয় না। এর ফলে শিশুরা অতি দুর্বল এবং অল্প বয়সেই জীবন হারাতে পারে। যদি বর-কনে দুজনেই এই রোগের বাহক হন, তাহলে তাদের সন্তানদের এই রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
  • তাই এই রোগের বাহক হলে বিয়ের আগে সতর্ক হওয়া উচিত। বাংলাদেশে অনেক পরিবারই এই রোগে আক্রান্ত সন্তান নিয়ে কষ্টভোগ করে থাকে।

৩. যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা

  • এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি ইত্যাদি রোগ যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ের আগে এসব রোগ পরীক্ষা না করালে পরিবারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা করানো কঠিন হয়ে যায়। এজন্য বিয়ের আগে এই পরীক্ষা করানো এবং যদি কেউ আক্রান্ত হন তবে যথাযথ চিকিৎসা করানো জরুরি।

৪. বংশগত রোগের পরীক্ষা

  • কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড সমস্যা, কিংবা কিছু মানসিক রোগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসে। যদি পরিবারের কারো এ ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে বিয়ের আগে পরীক্ষা করানো উচিত যাতে পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদ থাকে।

৫. বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা

  • বন্ধ্যত্বের সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান পরীক্ষা করানো হয়। নারীদের ক্ষেত্রে পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাফি ও বিভিন্ন হরমোনের পরীক্ষা যেমন থাইরয়েড, প্রলেকটিন, টেস্টোস্টেরন ইত্যাদি জরুরি। এতে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া যায় এবং দাম্পত্য জীবনে সন্তানের জন্য পরিকল্পনা করা যায়।

৬. ক্রনিক রোগ স্ক্রিনিং

  • ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পরীক্ষা করালে রোগ ধরা পড়ে এবং আগে থেকেই চিকিৎসা শুরু করা যায়। এতে পরবর্তী সময়ে জটিলতা এড়ানো যায়।

৭. মানসিক রোগ পরীক্ষা

  • অনেক সময় সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগকে অনেকেই ছোট করে দেখেন। কিন্তু এসব রোগ সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে ব্যক্তির জীবন ও পারিবারিক জীবন ব্যাহত হয়। বিয়ের আগে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, যাতে পরবর্তী জীবনে পরিবারের সবাই সুখী ও সুস্থ থাকতে পারেন।


একটি সুখী ও স্বাস্থ্যবান দাম্পত্য জীবনের জন্য সামাজিক বিষয় যেমন পারিবারিক মতামত, অভিজ্ঞতা ও মনের মিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

তাই বিয়ের আগে বর-কনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ ও ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
 

হ্যাপী

×