ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ক্যারিয়ারের শুরুতে বেতন নিয়ে চিন্তা করবেন না!যে কারণে বলেছেন ওয়ারেন বাফেট

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:২৯, ৪ জুন ২০২৫

ক্যারিয়ারের শুরুতে বেতন নিয়ে চিন্তা করবেন না!যে কারণে বলেছেন ওয়ারেন বাফেট

বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, ক্যারিয়ারের প্রাথমিক পর্যায়ে কত টাকা বেতন পাচ্ছেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। তার মতে, এর চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি কার সঙ্গে কাজ করছেন, কাদের কাছাকাছি সময় কাটাচ্ছেন এবং কোন পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলছেন।

এই অভিমত ব্যক্ত করেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও বাফেট গত ৩ মে কোম্পানির বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায়। তিনি এ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন, চলতি বছরের শেষে তিনি প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তবে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

১৯৬৫ সালে ক্ষয়িষ্ণু একটি টেক্সটাইল কোম্পানি হিসেবে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কেনার পর, সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ কংগ্লোমারেটে পরিণত করেন বাফেট। ২০২৪ সালে কোম্পানিটির বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার, যা তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তির কাতারে রেখেছে।

এত দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনের কারণে, প্রতি বছর হাজারো বিনিয়োগকারী বার্কশায়ারের বার্ষিক সভায় অংশ নেন ‘অমাহার ওরাকল’ নামে খ্যাত এই কিংবদন্তির বক্তব্য শুনতে। এবার এক তরুণ বিনিয়োগকারী তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শেখা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর কথা জানতে চাইলে বাফেট বলেন, ‘আপনি যাদের সঙ্গে মিশছেন, কাজ করছেন, বন্ধু বানাচ্ছেন তাদের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনার জীবন তাদের দিকেই গড়িয়ে যাবে।’

‘যাদের অধীনে কাজ করবেন, খুব সাবধান হোন’
বাফেটের মতে, ভালো কোনো পেশাগত দক্ষতা অর্জন ও উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়া নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনি যাদের সান্নিধ্যে কাজ করছেন, তারাও আপনার ব্যক্তিত্ব ও সাফল্যে গভীর প্রভাব ফেলে।

তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে বেতন নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না। বরং মনোযোগ দিন কাদের অধীনে কাজ করছেন, কারণ আপনি ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাস ও মানসিকতা রপ্ত করে ফেলবেন। এমন কিছু চাকরি আছে, যেগুলো নেওয়া উচিত নয়।’

বাফেট আরও বলেন, এমন কাজ খোঁজার চেষ্টা করুন যেটা আপনি উপভোগ করেন, আর এমন মানুষদের অধীনে কাজ করুন যাদের আপনি শ্রদ্ধা করেন এবং যাদের কাছ থেকে কিছু শেখা সম্ভব। অন্যের সফল পথ অনুকরণ না করে বরং নিজের আগ্রহ ও মেধাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

‘আমার জীবনে পাঁচজন বস ছিলেন, প্রত্যেকেই দারুণ মানুষ ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিই, নিজেই নিজের বস হওয়াই ভালো। তারপরও যদি এমন কাউকে পান যার সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে, তাহলে সেখানেই থাকুন,’ বলেন বাফেট।

‘যদি আশেপাশে নির্বোধ কাজকর্ম চলতে থাকে, দূরে থাকুন’
বার্কশায়ারের মতো সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ আজকের তরুণদেরও রয়েছে বলে মনে করেন বাফেট। তবে তিনি অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

‘আপনার আশেপাশে যদি খুব বোকামিপূর্ণ কাজ চলতে থাকে, তাহলে তার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। কেউ যদি শুধুমাত্র ঋণ নিয়ে বা বাজে সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে বেশি অর্থ উপার্জন করে, তাহলে সেটা ভুলে যান। এই ধরনের পথ শেষ পর্যন্ত আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কৌশলের পক্ষে বরাবরই সওয়াল করেছেন বাফেট। বাজারের ওঠানামা নিয়ে হইচই করা বা দ্রুত ধনী হওয়ার চেষ্টা তার দর্শনের বাইরে। যেমন তিনি ১৯৯৬ সালের শেয়ারহোল্ডার চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আপনি যদি কোনো শেয়ার ১০ বছর ধরে রাখতে প্রস্তুত না হন, তাহলে ১০ মিনিটের জন্যও তা কেনার কথা ভাববেন না।’

তিনি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন, পরিমিতি বোধ, ধৈর্য এবং বাজারের উন্মাদনা কিংবা ভীতিকে উপেক্ষা করার মানসিকতাই দীর্ঘমেয়াদে সাফল্যের চাবিকাঠি। ২০১৮ সালের বার্ষিক চিঠিতে বাফেট লেখেন, ‘ভিড়ের আতঙ্ক বা উল্লাসকে এড়িয়ে, কিছু মৌলিক বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সামর্থ্যই একজন সফল বিনিয়োগকারীকে আলাদা করে।’

ওয়ারেন বাফেটের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই যদি আপনি সঠিক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, সৎ ও মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে অর্থ বা পদমর্যাদা একদিন আপনার দ্বারেই আসবে। একে সরলভাবে বলা যায়: বেতন নয়, মনন গঠনের দিকেই দৃষ্টি দিন। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে উঠবে আপনার দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/5af98kkw

আফরোজা

×