ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রংপুরের শিঙাড়া হাউস: পাঁচ যুগেরও বেশি সময়ের স্বাদের ঐতিহ্য!

মোঃ সুজা উদ্দিন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রংপুর 

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৩১ মে ২০২৫

রংপুরের শিঙাড়া হাউস: পাঁচ যুগেরও বেশি সময়ের স্বাদের ঐতিহ্য!

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

রংপুর শহরের হাড়ি পট্টি এলাকায় অবস্থিত ‘শিঙাড়া হাউস’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি যেন স্বাদের এক ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী। সারি সারি সাজানো শিঙাড়া, আর তার সঙ্গে বিশেষ মসলায় তৈরি সস - এই সাধারণ দৃশ্যই প্রতিদিন স্থানীয় ও দূরদূরান্তের ভোজনরসিকদের ভিড় জমায় এই ছোট দোকানটিতে।

ষাট বছরের স্বাদের যাত্রা
১৯৬০ সালে কানাই লাল বর্মণ নামে এক ব্যক্তি এই শিঙাড়া হাউসটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিন থেকেই এর শিঙাড়ার ব্যতিক্রমী স্বাদ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, শিঙাড়া হাউসের নাম দ্রুতই প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং ধীরে ধীরে এটি রংপুরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। কানাই লাল বর্মণের মৃত্যুর পরও তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম সফলভাবে এই ঐতিহ্যবাহী শিঙাড়া হাউস পরিচালনা করে চলেছেন, যা এর দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের প্রমাণ।

ভিড় আর ব্যস্ততার এক ভিন্ন চিত্র
দোকানটি আকারে ছোট হলেও এর জনপ্রিয়তা বিশাল। দিনের বেলায় যেমন ভিড় লেগেই থাকে, সন্ধ্যা নামতেই সেই ভিড় যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তখন শিঙাড়ার স্বাদ নিতে আসা গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন ধরতে হয় বসার জায়গার জন্য। কারিগরদেরও যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। দক্ষ হাতে মুহূর্তেই ময়দার সঙ্গে আলু মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে একের পর এক সুস্বাদু শিঙাড়া। তাদের অবিরাম প্রচেষ্টা এবং দক্ষতা শিঙাড়া হাউসের প্রাণ।

ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সংযোগস্থল
স্থানীয়দের স্মৃতিচারণায় জানা যায়, স্বাধীনতার আগে এই শিঙাড়া হাউস ছিল বিশিষ্ট নাগরিকদের আড্ডাস্থল। কানাই লাল বর্মণের উপস্থিতিতে সেই আড্ডা আরও জমে উঠতো। দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে রংপুরে আসা মানুষজনের জন্যও এটি ছিল একটি প্রিয় নাস্তার ঠিকানা। এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি শুধু খাবারই নয়, বরং এক সামাজিক মিলনমেলার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও অটুট জনপ্রিয়তা
শুরুতে মাত্র এক টাকায় চারটি শিঙাড়া বিক্রি হলেও সময়ের সাথে সাথে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির মতোই শিঙাড়ার দামও বেড়েছে। বর্তমানে ১৫ টাকায় তিনটি শিঙাড়া পাওয়া যায়। তবে দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও এর জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি, যা এর অতুলনীয় স্বাদেরই প্রমাণ।

বিশেষ অতিথির প্রশংসা
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী স্বয়ং রংপুরের এই শিঙাড়া হাউসে এসেছিলেন। তিনি শিঙাড়া খেয়ে এর ভূয়সী প্রশংসাও করেন, যা এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

শিঙাড়া হাউসের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় বর্মণ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে টিকে আছে শিঙাড়া হাউসটি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়, আর সে কারণেই প্রতিদিন তাঁর দোকানে এই অনবদ্য ভিড় দেখা যায়। রংপুরের 'শিঙাড়া হাউস' শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি জীবন্ত কিংবদন্তি যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বাদের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

নোভা

×