
বর্তমান সময়ে সুস্থ শরীর নিয়ে যেখানে অনেকে জীবনসংগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, সেখানে দেলোয়ার হোসেন এক হাতে চালাচ্ছেন প্যাডেল রিকশা। সমাজের চোখে তিনি একজন প্রতিবন্ধী, কিন্তু নিজের চোখে তিনি একজন সংগ্রামী, একজন সম্মানজনক জীবনযাপনকারী মানুষ।
দেলোয়ার হোসেন, বয়স ৫০, থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুর সংলগ্ন ঝিলপাড় এলাকার একটি রিকশা গ্যারেজে। কয়েক বছর আগে সাতক্ষীরার একটি ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে তার ডানহাতটি কাঁটা পড়ে যায়। চিকিৎসা আর হতাশার সেই কঠিন সময় কাটিয়ে তিনি জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। জীবনযুদ্ধে ফিরেন আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে, শুরু হয় তার এক হাতে প্যাডেল চালিত রিকশা চালানো।
প্রথমদিকে নানান প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এখন তিনি এই কাজটি উপভোগ করেন।
কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “মামা, ভিক্ষা করলে পেট চলতো হয়তো, কিন্তু মন সায় দিত না। আমার মনে হয়, যদি শরীরের কিছুটা থাকে, তা দিয়েও কিছু করা যায়। আমি তো হেরে যাইনি। আমি তো তবুও চলতে ফিরতে পারছি, নিজে পরিশ্রম করে দুই ছেলে-মেয়ে, ফ্যামিলি দেখাশোনা করতে পারছি। কত মানুষের তো সেই সামর্থ্যটুকুও নাই। তাদের থেকে আল্লাহ অনেক ভালো রাখছে, এটাই হাজার শুকরিয়া।”
হতবাক হয়ে শুনছিলাম অদম্য দেলোয়ারের কথা। মানুষটি খুব সরল, নম্র, কিন্তু তার মধ্যে আছে এক অসাধারণ আত্মবিশ্বাস। ভিক্ষা নয়, অনুদান নয়, নিজের ঘামে উপার্জিত রোজগার দিয়েই তিনি বাঁচতে চান।
রিকশাচালক দেলোয়ারের জীবনের এই অধ্যায় শুধুই কষ্টের নয়, তা এক অনবদ্য অনুপ্রেরণা। হার না মানা এই মানুষটি আমাদের মনে করিয়ে দেন সাহস, দায়িত্ববোধ আর মনের শক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মিমিয়া