
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকগুলোর মধ্যে দোয়েল শুধু একটি পাখি নয়—এটি ছিল এক সময়কার সকালবেলার সঙ্গী, শিশুর মুখে মুখে থাকা ছড়া, আর গ্রামের প্রতিটি আঙিনায় চেনা এক প্রাণ। মাটির কাছাকাছি লাফিয়ে চলা এই পাখিটির সরলতা যেন বাংলার সাধারণ মানুষের প্রতিফলন।
সাদা-কালো পালকে মোড়া, ছোট্ট শরীর, আর একটানা ছন্দে ভাঙা গান—দোয়েলের কণ্ঠে ছিল দেশজ সুর। অথচ এখন এই চেনা ডাক হারিয়ে যাচ্ছে। শহরের কংক্রিটে আটকে গেছে সবুজ, বন্ধ হয়েছে খোলা জানালায় বসে পাখি দেখার সেই শৈশব।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দোয়েলকে জাতীয় পাখি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়—যদিও এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সুনির্দিষ্ট সরকারি দলিল না থাকলেও, এটি দীর্ঘদিন ধরেই পাঠ্যপুস্তক, প্রতীক এবং সরকারি ব্যবহারে ‘জাতীয় পাখি’ হিসেবে স্বীকৃত।
একসময় প্রতিটি গ্রামে, এমনকি শহরতলির বাড়িগুলোতেও দোয়েলের উপস্থিতি ছিল সাধারণ দৃশ্য। মাটিতে নেমে পোকামাকড় খুঁজে খুঁজে খাওয়া, গাছের ডালে বসে ডাকাডাকি করা—এসব দৃশ্য এখন বিরল। আধুনিক নগরায়ণ, বনভূমি ধ্বংস, কীটনাশকের ব্যবহার ও মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন দোয়েলের প্রজননে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN)-এর রেড লিস্ট অনুযায়ী, দোয়েল এখনও "Least Concern" ক্যাটাগরিতে রয়েছে—অর্থাৎ বৈশ্বিকভাবে এটি এখনও বিপন্ন নয়। তবে পাখিবিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। বাসস্থান হারানো, খাদ্য সংকট এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এই পাখির স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে।
আমরা দোয়েলকে রেখেছি সরকারি লোগোতে, প্রতীকচিহ্নে, নামকরণে—দোয়েল চত্বর, দোয়েল সম্মাননা, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামেও। কিন্তু বাস্তবেই যদি এই পাখি না টিকে থাকে, তবে এসব নাম কেবলই হবে ফাঁপা স্মৃতি।
শিশুদের নতুন প্রজন্ম অনেকেই এখন দোয়েলের ডাক চিনে না, বাস্তবে দোয়েল দেখেওনি। তারা দোয়েল শিখছে বইয়ে, কিন্তু তার গানের সুরে নয়। আমাদের উচিত এখনই প্রকৃতিতে দোয়েলের জন্য জায়গা তৈরি করা—গাছ লাগিয়ে, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে, সচেতনতা বাড়িয়ে। কারণ জাতীয় পাখি শুধু প্রতীকে বাঁচে না, তাকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখার দায় আমাদের সকলের।
নোভা