
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার রামপুরায় বিটিভি ভবনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন
জনমানুষের স্বস্তি ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করা অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের সীমিত সম্পদের সুষম বণ্টন এবং বৈষম্য নিরসন। অন্তর্বর্তী সরকারের এই বাজেটের লক্ষ্য স্বপ্ন দেখা নয়, অর্থনীতির ঘাত নিরাময়। ভগ্নপ্রায় অর্থনীতিকে জরুরিভাবে মেরামতের মাধ্যমে স্থিতিশীল করার চেষ্টা এবং ব্যবস্থাপনাগত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি প্রয়াশ।
সে লক্ষ্য পূরণেই অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম জাতীয় বাজেটের আকার কমানোর প্রস্তাব করেছেন। সরকারের পুরো বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছেন। এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কম। যদিও এর মধ্য দিয়ে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে চলা বাজেটের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারা প্রথমবারের মতো ভেঙে গেল। অবশ্য বাজেটের এই কাটছাঁটকে রাজস্ব একীভূতকরণ কৌশলের অংশ হিসাবে বলা হচ্ছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য এবং আরও দক্ষ আর্থিক পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনভাবে ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে।’
জিডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকারও এবার ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম। এর আগে সর্বশেষ এত কম অনুপাত দেখা গিয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে, তখন অনুপাত ছিল ১২ দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পতিত আওয়ামী লীগ সরকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি। অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহিণীদের অবদানকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, তাদের অবৈতনিক শ্রম স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। ভবিষ্যতে জাতীয় জিডিপিতে তাদের অর্থনৈতিক অবদান কীভাবে যোগ করা যায় তার উপায় খোঁজার পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে তিন শূন্যের দেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বাজেট বক্তৃতায় বাংলাদেশকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বনমুক্ত জাতিতে রূপান্তরিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তার আশা, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় তৈরি’ এ বাজেট ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাজ গড়ে তোলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং একটি উন্নত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মূল লক্ষ্য হল শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্গমনকারী একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে, আমরা আমাদের জনগণের জীবনমানের গভীর রূপান্তর আনতে এবং বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত হতে চাই।’ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি স্থাপন করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাজেট ঘাটতিতে চমক ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় ৫ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এই বাজেট ব্যয়ের বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে করসমুহ থেকে পাওয়া যাবে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর সমূহের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাইরে কর পাওয়া যাবে ১৯ হাজার কোটি টাকা। আর করের বাইরে সরকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব প্রাপ্তির বাইরেও সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা অনুদান প্রাপ্তির আশা করছে, যা সরকারের রাজস্ব আয়ের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফলে সামগ্রিকভাবে সরকারের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার চেয়ে কম। এই ঘাটতি জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রতি বছর রাজনৈতিক সরকারগুলো বাজেট তৈরি করে থাকে জিডিপির ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি করে। কিন্তু অন্তুর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অত্যন্ত মুন্সিয়ানা দেখিয়ে এই বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছেন। এখানেই বাজেট প্রণয়নে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দক্ষতা ফুটে উঠেছে।
অর্থ উপদেষ্টা এই বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করেছে। এরমধ্যে বৈদেশিক নিট ঋণ প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে আভ্যন্তরীণভাবে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। আর ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় সঞ্চয় পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেট ॥ নতুন বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিদ্যমান বাজেটও সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন। রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সাত লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এরমধ্যে উন্নয়ন ব্যয়ও ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। উন্নয়ন ব্যয় কমার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকারও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি এক লাখ ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ এবং এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা আভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
বাজেট বিশ্লেষণ ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি ব্যয়ের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার তহবিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বড় স্বস্তির জায়গা হচ্ছে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে আমরা আপাতত বিদ্যুতের মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে ক্রমান্বয়ে ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সার্বিক ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছি এবং বিদ্যুতের ব্যয় কমাতে এনার্জি অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজস্ব বাজেট পর্যালোচনা ॥ আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়েনি। তবে পরবর্তী ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে কৃষিতে দেশের মানুষকে উৎসাহিত করতে এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি কার্যক্রম থেকে বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গেজেটভুক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে ন্যূনতম কর। সেই সঙ্গে নতুন করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করতে ন্যূনতম করহার ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে নতুন বাজেটে সঞ্চয়কারীদের সুখবর দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে দিতে হবে না কোনো প্রকার আবগারি শুল্ক। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরাও স্বস্তি পাবেন এবারের বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব রোগের ওষুধের দাম কমানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদেরও খুশি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহার্ঘ ভাতা হিসাবে উল্লেখ করা না হলেও, নতুন বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে সিগারেটের দাম না বাড়লেও প্রস্তাবিত বাজেটে ধূমপায়ীদের ওপর করভার আরও চেপেছে। এই বাজেটে সিগারেট পেপার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই হার সাড়ে সাত শতাংশ রয়েছে। ভ্যাটের হার দ্বিগুণ বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তের ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়বেন।
বাংলাদেশের বাজেটে কালো টাকা একটি বহুল আলোচিত বিষয়। প্রতি বছরই বাজেটে কোনো না কোনোভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ জন্য গুনতে হবে পাঁচগুণ পর্যন্ত কর। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূলত আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত সম্পদ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এজন্য করের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এখাতে কর বাড়ানো হয়েছে পাঁচগুণ পর্যন্ত।
তবে সবমিলিয়ে রাজস্ব বাজেটে কর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এভাবে কর কাঠামোয় পরিবর্তন ও কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
উপদেষ্টা পরিষদে বাজেট অনুমোদন ॥ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের এই বাজেট দেশের ৫৪তম জাতীয় বাজেট এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথম বাজেট। অর্থ উপদেষ্টা বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। ৩টা ২৫ মিনিটে তিনি বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন। বক্তৃতায় তিনি সংক্ষিপ্ত আকারে বাজেটের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
এর আগে সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ অন্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনা। যা বিকেল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
আজ বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন ॥ আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন। যেহেতু বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই, তাই বাজেটের ওপর জুন মাসজুড়ে সংসদ সদস্যদের সাধারণ আলোচনার সুযোগ নেই বিধায় এ বছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা।
দেশের যে কোনো নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যে কোনো মতামত যে কোনো উপায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামত একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব, তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।