
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের দ্বিতীয় ধাপের উদ্দেশ্য দূরত্ব ঘুচিয়ে জুলাই সনদে আরও কিছু যোগ করা। যেটুকুই আলাপ ছিল, দূরত্ব ছিল, সেই দূরত্বকে ঘুচিয়ে এনে যাতে জুলাই সনদের বর্তমানে যত ঐকমত্যের বিষয় আছে, তার সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে পারি। দেখতে সুন্দর লাগবে জাতীয় একটা সনদ হলো, অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি, গর্বিত জাতি হিসেবে আমরা যাতে দাঁড়াতে পারি। আমরা তো বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনীতি সৃষ্টি করিনি। আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, দেশের উন্নতি ও দেশের মঙ্গলের জন্য।’
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের শুরুতে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সারাদিনে যত মিটিং করি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই যখন আপনাদের সঙ্গে এ রকম বসার সুযোগ পাই, আলাপ করার সুযোগ পাই। কারণ এখানেই সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে এ রকম একটা কাজে আমি জড়িত হতে পেরেছি, নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। আপনাদের কথা শোনার জন্য এটা কীভাবে আপনারা গাইড করবেন কোথায় নিয়ে যাবেন।’
বৈঠকে উপস্থিত দলগুলোকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংস্কার করার জন্য। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথা দিয়ে শুরু করি। প্রথমে আলাপের মধ্যে নানা প্রসঙ্গে ঠিক হলো যে আমরা কিছু কমিশন করব, যেগুলো দ্বারা প্রকৃতপক্ষে ভেতরে গিয়ে জিনিসটা তৈরি করবে। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। শেষ পর্যন্ত আমরা কমিশন করলাম। প্রথমে ৬টা কমিশন, পরবর্তীতে আরও ৬টা। তাদের ৯০ দিন সময় দিয়েছিলাম।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে তারা করতে পেরেছে। কিছু কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে কোনো অসুবিধা নাই। কমিশনের রিপোর্ট এলো। এরপরে আমরা যে ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, সেটা কীভাবে হবে? সেটা থেকে একটা আইডিয়া এলো যে একটা ঐকমত্য কমিশন বলে আলাদা একটা কমিশন করার। সেটা ফলপ্রসু হয়েছে, অধ্যাপক আলী রীয়াজ যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই। যেভাবে আপনারা সহযোগিতা করেছেন আনন্দ সহকারে পার্টিসিপেট করেছেন।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘প্রথম পর্ব শেষ হলো। প্রথম পর্বে আমরা যত রিকমেন্ডেশন বা সুপারিশ আছে, কীভাবে আমরা একমত হলাম, কারা কোনটাতে একমত হলো, সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদ করব এটাই হলো আমাদের লক্ষ্য, যেখানে আমরা সবার ঐকমত্যগুলো তুলে ধরব।’
প্রিধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দ্বিতীয় পর্বের আলাপটা হলো, যেটুকু দূরত্ব ছিল সেটাকে ঘুচিয়ে এনে যেন আমাদের জুলাই সনদে বর্তমানে যতগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে, তার মধ্যে যে আরও কিছু যোগ করতে পারি, জাতীয় একটা সনদ হলো। অনেকগুলো বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত যে, আমরা এ রকম বিভক্তিকরণের প্রক্রিয়ার রাজনীতি সৃষ্টি করিনি। আমরা সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য, দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য। আশা করি আমরা সেই পর্বে ঢুকতে পারব এবং অত্যন্ত চমৎকার একটা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারব।’
বিকেল চারটার পর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ধন্যবাদ জানান অংশগ্রহণের জন্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য দেশের জন্য এটা ইম্পরট্যান্ট একটা ইভেন্ট। যে সব পলিটিক্যাল পার্টি এই ডায়ালগে যুক্ত হয়েছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি আমরা জুলাই অভু্যৃত্থানের মাধ্যমে পেয়েছি। সেই মোতাবেক সবাই কাজ করছেন, এজন্য প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অংশ নেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ আবু তাহের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হারুনুর রশীদ। এনসিপির পক্ষে অংশ নিয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।